অনলাইন ডেস্ক:
চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে দেশের বিভিন্ন জেলায় র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আরও নয়জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া চোরাকারবারিদের নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন দুইজন। এ নিয়ে চলতি মাসের ৪মে থেকে চলা মাদকবিরোধী এই অভিযানে রবিবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৬ জনে। এর মধ্যে শুক্রবার দিবাগত রাতে সবচেয়ে বেশি ১২ জন মারা যান।
পুলিশ ও র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী নিহতরা সবাই মাদক কারবারে জড়িত। তাদের সবার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদকবিরোধী আইনে মামলা আছে।
কুমিল্লায় বন্দুক যুদ্ধে নিহত ৮ জন :
কুমিল্লায় মাদক বিরোধী অভিযানে ২২ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ৫ দিনে ৮ জন তালিকভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। মাদক পাচারের অন্যতম রুট ভারতীয় সামান্তবর্তী উপজেলার আদর্শ সদর , সদর দক্ষিণ, চৌদ্দগ্রাম , বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ায় পুলিশ – মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে পৃথক বন্দুক যুদ্ধে তারা নিহত হয়।
২২ মে মঙ্গলবার রাত একটায় আদর্শ সদরের বিবির বাজার এলাকায় শরীফ নামের (২৬) পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সে সদর দক্ষিণ উপজেলার মহেশপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ৫ টি মাদক মামলা রয়েছে।
পৃথক অভিযানে একই স্থানে পিয়ার আলী (২৮) বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সে আদর্শ সদর উপজেলার শুভপুর গ্রামের আলী মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১৩ টি মামলা ছিল।
২৩ শে মে বুধবার রাত সাড়ে ১২ টায় আদর্শ সদর উপজেলার চাঁনপুর ব্রীজ এলাকায় ইসহাক ওরোফে ইসা (৩৫) ) পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সে আদর্শ সদর উপজেলার আব্দুল জলিলে ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১১ টি মামলা রয়েছে।
২৪ মে বৃহস্পতিবার রাত একটায় চৌদ্দগ্রামের আমানগন্ডায় এলাকায় পুলিশের বন্দুক যুদ্ধে বাবুল, ওরোফে লম্বা বাবুল নিহত হয়। সে চৌদ্দগ্রামের বৈদ্দের খিল গ্রামের আমান মিয়ার ছেলে।তার বিরুদ্ধে ৫ টি মামলা ছিল।
একই সময় সদর দক্ষিণ উপজেলার গোয়ালমথন এলাকায় রাজিব (২৬) পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সে সদর দক্ষিণ চাঙ্গিনি গ্রামের মৃত শাহ আলম মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১৩ টি মামলা ছিল।
২৫ মে শুক্রবার রাত ১২ টায় বুড়িচং উপজেলার মহিষপাড়া এলাকায় কামাল হোসেন, ওরোফে ফেন্সি কামাল (৫১) পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। সে আদর্শ সদর উপজেলার রাজমঙ্গল গ্রামের হিরণ মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১২টিরও বেশি মামলা ছিল।
২৬ মে শনিবার রাত দেড়টায় ব্রাহ্মণপাড়ার বাগড়া এলাকায় বাবুল (৪০) পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সে ব্রাহ্মণপাড়া আশাবাড়ি গ্রামের আব্দুল মালেকে ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১৬ টি মামলা রয়েছে।
একই সময় আলমাস(৩৬) নামে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সে ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় দক্ষিণ তেতা ভূমি গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ৮ টি মামলা রয়েছে।
এছাড়া পুলিশের বিশেষ অভিযানে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় নারী সহ কয়েক শতাধিক মাদক সেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রতিটি বন্দুকযুদ্ধের কাহিনি একই রকম। ‘মাদকের কারবারি’কে নিয়ে অভিযানে বের হলে গুলি করে তাদের সহযোগীরা। আর গোলাগুলির এক পর্যায়ে নিহত হন সন্দেহভাজন মাদকের কারবারি। কখনও কখনও পুলিশের এক-দুই জন সদস্য আহতও হন।
গত ৩ মে ঢাকায় র্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিতে বাহিনীটিকে নির্দেশ দেন। এরপর থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে র্যাব। তাদের পাশাপাশি পুলিশ ও ডিবি পুলিশও অভিযানে মাঠে নামে।
প্রথম দুই-তিন দিন কোনো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। র্যাবের অভিযান শুরুর পর প্রথম বন্দুকযুদ্ধ হয় ৭ মে রাতে; তাতে নারায়ণগঞ্জ ও কুষ্টিয়ায় একজন করে নিহত হয়। এরপর ৯ মে রাজশাহীতে নিহত হয় একজন।
১৪ মে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব প্রধান বেনজির আহমদ মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি আবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তার হুঁশিয়ারির পরই থেকে মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান জোরদার হয়।
নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিহত হয় গত ২৫মে শুক্রবার দিবাগত রাতে। ওই রাতে ১২ জন নিহত হয়। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নয়জন এবং তিনজন নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত হন।
শনিবার রাতে নিহত হয় ১১জন। এর মধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, ঠাকুরগাঁওয়ে একজন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। আর মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে দুইজন মারা গেছেন নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে।
এই নিয়ে গত আট দিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৭৬ ‘মাদক কারবারির’ মৃত্যু হলো। এছাড়া এই আট দিনে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে মারা যান ১০ কারবারি। সবমিলিয়ে গত ৪মে থেকে অভিযান শুরুর পর অন্তত ৯৬ জন মাদক বিক্রেতা নিহত হলেন।
কোন তারিখে কতজন নিহত
১৯মে দিবাগত রাতে বরিশাল, ময়মনসিংহ, যশোর, টাঙ্গাইল, ফেনী ও দিনাজপুরে পুলিশের সঙ্গে ছয়টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে ছয়জন নিহত হয়েছেন।
২০মে যশোরে মাদকের সঙ্গে জড়িত তিনজন নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে মারা যান। এছাড়া সেদিন রাতেই রাজশাহীতে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একজন, নরসিংদীতে একজন, ঝিনাইদহে একজন, টাঙ্গাইলে একজন; চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’একজন এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে একজন মারা যায়।
২১মে দিবাগত রাতে নয় জেলায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ১১ জন। এর মধ্যে কুমিল্লা ও নীলফামারীতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুইজন করে মোট চারজন এবং চুয়াডাঙ্গা, নেত্রকোণা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও দিনাজপুরে একজন করে নিহত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীতে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনজন নিহত হয়েছেন।
২২মে দিবাগত রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত ১০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কুষ্টিয়ায় দুইজন এবং জামালপুর, কুমিল্লা, ঠাকুরগাঁও, চুয়াডাঙ্গা, লালমনিরহাট ও রংপুরে একজন করে মোট আটজন নিহত হয়েছেন। আর গাইবান্ধা ও ফেনীতে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন দুইজন।
২৩মে দিবাগত রাতে কুমিল্লা ও ফেনীতে দুইজন করে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জ থেকে একজনসহ মোট ছয়জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। এছাড়া মাগুরায় দুইজন এবং সাতক্ষীরা ও কক্সবাজার থেকে দুইজনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা চারজনের।
২৪মে বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত দেশের সাত জেলায় বন্দুকযুদ্ধে নয়জন নিহত হয়। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নেত্রকোণায় দুইজন এবং সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, কুমিল্লা, গাইবান্ধা ও শেরপুরে একজন করে মোট সাতজন নিহত হয়েছেন। আর রাজধানী ঢাকায় র্যাবের গুলিতে নিহত হয়েছেন একজন।
২৫মে দিবাগত রাতে থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত দেশের আট জেলায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নয়জন নিহত হয়। আর মাদক বিক্রেতাদের নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে তিন জেলায় নিহত হয়েছেন তিনজন।
এদের মধ্যে কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুইজন এবং ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, ঠাকুরগাঁও ও পাবনায় একজন করে নিহত হয়েছেন। দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন একজন করে। আর ফেনী, বরগুনা ও দিনাজপুরে একজন করে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত হন।
২৬মে দিবাগত রাতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে নিহত হয় নয়জন। এর মধ্যে টেকনাফ পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হকও রয়েছেন। আর মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে দুইজন মারা যান নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে।
Leave a Reply