অনলাইন ডেস্ক
‘এই যে আমার ভাইয়ের ভাঙা হাতের রড, এই যে কোমরে বেল্ট -আমার কেনা, এটাই আমার ভাই রনি।’মর্গের ভেতরে ভাইয়ের পোড়া লাশ নিজের হাতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন আর আহাজারি করে এসব বলছিলেন-অ্যাডভোকেট সুমাইয়া আজিজ।
বুধবার ( ২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে এগারটায় সুমাইয়ার সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এই প্রতিবেদকের দেখা হয় । তখন সেখানে আহতদের নামের তালিকাতে ভাইয়ের নাম আছে কিনা তা খুঁজে দেখছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ভোরে ঢামেক মর্গে যখন লাশ আনতে থাকেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা, তখন সেখানে ছুটে যান তিনি। কিন্তু আগুনে পোড়া মৃতদেহগুলির বেশিরভাগই পোড়া ছাই। তাই সুমাইয়ে প্রতিটি লাশের ব্যাগের চেন খুলে খুঁজতে থাকেন ভাইকে। শেষে ভাইয়ের ভাঙা হাতে অপরারেশনের পর লাগানো রড আর নিজের কিনে দেওয়া বেল্ট দেখে তাকে শনাক্ত করেন ।
সুমাইয়ার মত রাতভর ভাতিজাদের খুঁজেছেন চাচা রাসেল কবীর। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিট, জরুরি বিভাগসহ মেডিকেলে প্রতিটি জায়গায় খুঁজেন। কিন্তু আহত বা দগ্ধদের ভিড়ে দুই ভাতিজা রাজু (৩০) আর মাসুদ রানাকে (৩৫) পাননি। পরে সকাল ৭টায় মেডিকেলে আসা লাশের স্তুপে খুঁজে পান তাদের।
রাসেল কবির সারাবাংলাকে বলেন, ওয়াহেদ ম্যানসনের রানা টেলিকম সার্ভিসের দোকানের ভেতরেই ছিল তারা দুজন। কান্নায় ভেঙে পড়া রাসেল জানান, দিন পনের আগেই বিয়ে করেন চাঁদনীঘাটের বাসিন্দা রানা। আগুন লাগার সময় দুই ভাই ফেক্সিলোডের দোকানে ছিল।তিনি বলেন, এখন কি বলব নতুন বউটাকে, দুই ছেলেই আগুনে পুড়ে মরল, কি বলব আমার ভাই-ভাবীকে?
সুমাইয়া আর রাসেলের মত এমন অনেক স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ আর এর আশপাশ। মর্গের উৎকট গন্ধ, পোড়া লাশের বিভৎসতা -কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই প্রিয়জনদের খুঁজছেন স্বজনরা।
একের পর এক চকবাজারের ধ্বংসস্তুপ থেকে লাশ বের করে আনছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। আর তা গুনে গুনে গাড়িতে করে পাঠানো হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল মর্গে। লাশের সারি এখন মর্গের ভেতর ছাপিয়ে বারান্দায় চলে এসছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে স্বজনদের ভিড়ও । কেউ খুঁজছে বন্ধুকে , কেউ ভাইকে , কেউ স্ত্রীকে । কেউ আবার স্তব্ধ হয়ে বসে আছে মর্গের সামনে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে নটা পর্যন্ত ৬৭টি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আনা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি লাশ নারীর, চার শিশু এবং বাকি ৫৮টি পুরুষের।
১৩ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছেন স্বজনরা।
Leave a Reply