অনলাইন ডেস্ক: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের (কুভিক) ছাত্রীনিবাস নবাব ফয়জুন্নেছা হলে বিভিন্ন খাতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একাধিক খাতে কোনো ধরনের রসিদ ছাড়া ছাত্রীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
কলেজের ছাত্রীনিবাসে ২ম বর্ষ থেকে শুরু করে মাস্টার্স পর্যন্ত ৪শ’র মতো ছাত্রী ভর্তি রয়েছে। হলে ভর্তিরত ২০১৭ সালের মাস্টার্স শেষপর্বের ছাত্রীদের বিদায় উপলক্ষে মাস্টার্স ছাড়া অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো রসিদ ছাড়াই ৪শ টাকা করে আদায় করা হয়েছে।
এছাড়া মাস্টার্স পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৩শ টাকা করে। সর্বমোট আদায় করা হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এদিকে বিদায় অনুষ্ঠানের দিন ছাত্রীদের খাবার বাবদ মিল থেকে ১শ ৯০টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রীদের বিদায় দেওয়ার নামে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কলেজ প্রশাসন থেকে আদায় করেছে হল কর্তৃপক্ষ। অনিকা নামে এক ছাত্রী জানান, অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমাদের জন্য রাতের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। যার টাকা মিল থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে। তাহলে বাড়তি ৪শ টাকা হল কর্তৃপক্ষ কিসের জন্য আদায় করেছে তা আমাদের জানা নেই।
এছাড়া ফয়জুন্নেছা হলের আরো কয়েকটি খাতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একাধিক সূত্র জানায়, হলে ভর্তিখাতে রসিদে ৭ হাজার টাকা আদায়ের তথ্য উল্লেখ আছে। কিন্তু হল কর্তৃপক্ষ ৯ হাজার ৫শ টাকা আদায় করে আসছে। বাকি ২ হাজার টাকার জন্য বাড়তি কোনো রসিদ দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রীরা।
ডাইনিংয়ের জামানত বাবদ রসিদে দেড় হাজার টাকা উল্লেখ থাকলেও ছাত্রীদের থেকে আদায় করা হয় দুই হাজার টাকা। সংস্থাপন ফি বাবদ পূর্বে ১শ টাকার মতো আদায় করা হলেও বর্তমানে ১৪০টাকা আদায় করা হচ্ছে। যারা দেরিতে হলে উঠছে সংস্থাপন বিল বাবদ ওইসব ছাত্রীদের থেকে এর ৫গুণ, অর্থ্যাৎ ৭শ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অপরদিকে কলেজের একাধিক বিভাগে ইনকোর্স পরীক্ষার নামে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কলেজ সূত্রে জানা যায়, সকল বর্ষে ইনকোর্সের দুটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যার জন্য প্রতি শিক্ষার্থী থেকে ২শ টাকা করে দুই দফা মোট ৪শ টাকা ভর্তি ও ফরম পূরণের সময় রিসিটের মাধ্যমে আদায় করা হয়।
কিন্তু কলেজের ব্যবস্থাপনা, উদ্ভিদ বিজ্ঞান এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ইনকোর্স পরীক্ষার নামে বাড়তি টাকা আদায় করা হয়েছে। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানায়, যে সকল শিক্ষার্থী টেস্ট ও ইনকোর্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি, ওই সকল শিক্ষার্থী থেকে ৪শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। বিষয়টি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
এ ধরনের ঘটনা ছাত্রদের পরীক্ষা বিমুখ করে তোলে। তাছাড়া পরীক্ষা ছাড়া কীভাবে শিক্ষার্থীরা ইনকোর্সের নম্বর পায়? ব্যবস্থাপনা বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ভর্তি ও ফরম পূরণের সময় আলাদাভাবে রসিদের মাধ্যমে ইনকোর্স ফি আদায় করা হয়েছে। তারপরও পরীক্ষার সময় বিনা রসিদে দুইবার মোট ৪শ টাকা আদায় করে বিভাগ। একাধিকবার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও পুনরায় ইনকোর্স পরীক্ষার নামে ২শ টাকা করে আদায় করেছে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ।
নবাব ফয়জুন্নেছা হলের একাধিক খাতে অনিয়মের বিষয়ে কথা হলে হল প্রভোস্ট নিলুফার সুলতানা বলেন, একটি টাকাও ছাত্রীদের অনুষ্ঠান বাবদ আদায় করা হয়নি। হলে ভর্তির সময় যে ৯ হাজার টাকা আদায় করা হয় তা তিনটি ভিন্ন ভিন্ন রসিদের মাধ্যমে আদায় করা হয়। প্রয়োজনে আপনি এসে দেখে যেতে পারেন।
সব বিষয়ে কথা হলে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর রতন কুমার সাহা বলেন, আমি ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় আছি। তুমি বৃহস্পতিবার আসো সব বিস্তারিত তোমাকে জানানো হবে। আমি এত বড় কলেজের প্রিন্সিপাল, সব বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
ইনকোর্সের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় হয়েছে স্বীকার করে অধ্যক্ষ বলেন, যারা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে তাদেরকে কারণদর্শানোপূর্বক টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। আর হলে যে শিক্ষকরা দায়িত্বে আছে তাদেরকে আমি চিনি। ব্যক্তিগতভাবে তারা খুব সৎ। হলে কোনো অনিয়ম হয়েছে এমন কথা ভিত্তিহীন।
Leave a Reply