অনলাইন ডেস্ক:
ভাত মুখে দিলেই বমি আসে। ভাত ছাড়া যে কোন খাবার খেলে এমন পরিস্থিতির হয় না। ভাত খেলে এমন হয়, জীবনে প্রথম শুনলেও সত্য। আর এমনি এক ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামে। তার নাম কাওছার আহম্মেদ। যুককের বয়স এখন ২০ বছর। বাবা মো. আফাজ উদ্দিন এবং মা মোমেনা খাতুন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে কাওছার সবার ছোট। কাওছার বর্তমানে নরসিংদী সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। সবার মতো সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবেই কাওছারের জন্ম হয়েছে। জন্মের পর তার কোনো সমস্যাই ছিলো না। সমস্যা শুরু হয় ছয় মাস বয়সে প্রথম ‘মুখে ভাত’ দেয়ার সময়। মুখে প্রথমবার ভাত দিতেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয় এবং বমি করে ফেলে।
পরিবারের লোকজন ভাবেন, আরেকটু বড় হোক তখন ভাত খাওয়ানো যাবে। দুই বছর পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খেয়েই বড় হয় সে। এরপর তাকে আবার ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তখনো সে ভাত খেতে চায় না। জোর করে ভাত খাওয়াতে গেলেই বমি করে দেয়। এরপর থেকে পরিবারের কেউ আর তাকে জোর করে ভাত খাওয়ানোর তেমন একটা চেষ্টা করেনি।
ভাতের বিকল্প হিসেবে কাওছারকে সুজি খাওয়ানো শুরু করেন মা। ৫-৬ বছর পর্যন্ত শুধু সুজি খেয়েই পার করে সে। এদিকে বয়স যত বাড়ছে, খাবারের চাহিদাও বাড়ছিল তার। সেজন্য তখন থেকে সুজির বদলে তাকে রুটি, দুধ, কলা, চিড়া, সেমাই খেতে দেয়া হয়।
কাওছার আহম্মেদের মা মোমেনা খাতুন জানান, ওর জন্মের ছয় মাস পর চাল দিয়ে রান্না করে নরম খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ভাত খেতে না চাইলে ওকে মারধর করেও কোনো লাভ হয়নি। বর্তমানে ওর বয়স ২০ বছর পার হলেও সে একবারও ভাত খায়নি। রুটি, বিস্কুট, ফলসহ অন্যান্য খাবার খায়। অবশেষে ওকে ওর মতো করেই খেতে দেয়া হয়। ওর যা ভালো লাগে, তা-ই খায়।
কাওছার আহম্মেদ জানান, ভাত দেখলেই আমার খারাপ লাগে। রুটি আমার প্রধান খাবার। এতেই আমি স্বাচ্ছন্দবোধ করি। আমি নিয়মিত ব্যায়াম করি। আমার স্বাস্থ্য ভাল, শরীরে কোনো সমস্যা নেই।
নারায়ণগঞ্জের সাবেক সিভিল সার্জন ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মো. আতিকুল সারোয়ার জানান, ভাত খেতে না পারাটা কোনো রোগ নয়। ভাতের পরিবর্তে সে রুটি ও অন্যান্য খাবার খাচ্ছে। তাকে তার মতো করেই খেতে দেয়া উচিত। তার যা ভালো লাগে, সে তা-ই খাবে। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই ভাত খায় না। তাতে তাদের তো কোনো অসুবিধা হয় না।
Leave a Reply