অনলাইন ডেস্ক:
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে আজ মনোনয়ন প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করার কথা রয়েছে বিএনপি’র। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির ২৪০ আসনে মনোনয়ন দেয়ার কথা রয়েছে।
দুটি জোটের সঙ্গে গত কয়েক দিন ধরেই বিএনপির আসন বণ্টন নিয়ে দরকষাকষি চলছে। শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত দরকষাকষি চলছে।বিএনপি ২৪০ আসনে প্রার্থী দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শরিকদের সর্বোচ্চ ৬০ আসন দেবে।এর মধ্যে ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলো পাচ্ছে ৪০-৪২ আসন। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলো পাচ্ছে ১৮-২০ আসন।২০-দলীয় জোটে বিএনপিসহ দল আছে ২৩টি। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি ছাড়া দল আছে চারটি।২০ দল বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী ও বিশ্বস্ত মিত্র। প্রায় এক দশক ধরে জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে চলছে জোটভুক্ত দলগুলো।২০ দলের বেশিরভাগ দলেরই রাজনৈতিক আদর্শ বিএনপির আদর্শের সঙ্গে মিল আছে। প্রায় প্রত্যেকটি দল জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। ধর্মীয় মূল্যবোধে তারা বিশ্বাসী।
বিগত দিনে বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামের যেসব কর্মসূচি দিয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগেই সমর্থন ছিল ২০ দলের।২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। তখন জোটের শরিক দলগুলোও বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে।তখন ২০ দলের শরিক দলগুলোর অনেক নেতাকে ক্ষমতাসীন দল থেকে নিশ্চিত আসন দেয়ার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিল। দুই-একজনকে জোট ছেড়ে এলে মন্ত্রিত্বের প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিল।কিন্তু কেউ ওই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। তারা বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি আস্থা দেখিয়েছে। জোটের সিদ্ধান্তে অনঢ় থেকেছে।যদিও আন্দোলন-সংগ্রামে ২০ দলের শরিক দলগুলোর সফলতা খুব একটা চোখে পড়েনি। তবে বিএনপি নেতৃত্বের প্রতি তাদের আনুগত্যে জোটের নেতাদের প্রতি বিএনপির এক ধরনের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
আর সে কারণেই আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে ২০ দলকে গুরুত্ব দিয়েছে বিএনপি। প্রায় ৪০টির মতো আসন দেয়া হচ্ছে জোটের শরিক দলগুলোকে।২০-দলীয় জোটের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে রোববার দিনভর বৈঠক করে বিএনপি। দুপুরে এলডিপি, এনপিপিসহ জোটের কয়েকটি শরিকের সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির নেতারা।
গুলশান কার্যালয়ে ওই বৈঠকে শরিকরা তাদের সম্ভাব্য তালিকা বিএনপির কাছে হস্তান্তর করেন। এর পর বিএনপির নীতিনির্ধারকরা নিজেদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।পরে রাতে আবারও শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। সেখানে কোন কোন আসনে ছাড় দেয়া হবে তা জানিয়ে দেয়া হয়।বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০-দলীয় জোটের শরিকদের ৪২ আসন দেবে বিএনপি।এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে ২৪, এলডিপিকে চার, বিজেপিকে একটি, এনপিপিকে একটি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিকে একটি, খেলাফত মজলিসকে একটি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে একটি আসন দেয়া হবে।জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন, বিএনপি এখন পর্যন্ত ২৫ আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে। জামায়াত আরও কয়েকটি আসনে ছাড় পেতে চেষ্টা করছে। তার দাবি, শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ আসন পেতে পারে।জামায়াত ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৫ আসন পেয়েছিল জোট থেকে।জামায়াত ছাড়া ২০ দলের প্রায় সব দলই বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অন্য প্রতীকে নির্বাচন করার কথা ভাবছে। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের হিসাব-নিকাশে তারা ধানের শীষ প্রতীকেই নির্বাচন করতে পারে।জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র নয় আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন দলটির প্রার্থীরা। এ বিষয়ে ঘোষণা আসবে আজকালের মধ্যে।জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, তারা ৫৩ আসনের তালিকা বিএনপিকে দিয়েছেন। ২৮ নভেম্বর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন। ধানের শীষে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হবে কিনা তা বলতে রাজি হননি তিনি।
জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির প্রত্যয়ন নিয়েই মনোনয়ন দাখিল করা হবে। জামায়াত ৫৩ আসনের তালিকা দিলেও সেখান থেকে কটি পাবে? এ প্রসঙ্গে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আলোচনায় এ বিষটি চূড়ান্ত হবে। জামায়াত যেসব আসনে নির্বাচন করতে চায়, সেখানে নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে গেছেন। জামায়াত আশাবাদী সম্মানজনক সংখ্যক আসনে জোটের মনোনয়ন পাওয়া যাবে।তবে জামায়াতের একটি সূত্র যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে, ৫৩ আসনের তালিকা দেয়া হলেও ৩৫ আসন পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৮ আসনে নির্বাচন করা জামায়াত ৩৩টিতে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল।
পাঁচ আসনে বিএনপি ও জামায়াত দুদলেরই প্রার্থী ছিল। গতবারের ৩৩টির ২৭টিতে এবারও জোটের মনোনয়ন চায় জামায়াত। গতবারের উন্মুক্ত পাঁচটি আসনের তিনটিতে জামায়াত দ্বিতীয় হয়েছিল। বিএনপির অবস্থান ছিল তৃতীয়। এগুলোতেও এবার জোটের মনোনয়ন চায় জামায়াত। নতুন করে রাজশাহী-১, বগুড়া-৪, ঢাকা-১৫, সাতক্ষীরা-১ ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনে জোটের মনোনয়ন চায়।জোটের মনোনয়নের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গণমাধ্যমে বলেন, বিএনপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। জোট ও ফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করে বাকিগুলো চূড়ান্ত করা হবে। অপেক্ষাকৃত যোগ্য, দক্ষ ও জনপ্রিয় নেতারাই দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন।
Leave a Reply