প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমরা উপকূলের মানুষ টেকসই বাঁধের দাবি করে আসছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শুধু বেড়িবাঁধ নয়, এর পাশাপাশি আমাদের আরও কিছু দাবিতে সোচ্চার হওয়া উচিৎ। একজন জলবায়ু কর্মী হিসেবে বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতেই মতামত পেশ করছি। প্রায়ই আমি বলি, ১০০ বছর পরে, সূর্যাস্তের সৌন্দর্য দেখতে আমাদের কক্সবাজারে না, চাঁদপুরে গেলেই চলবে। বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাস অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ তার মোট ভূমির এক তৃতীয়াংশ হারাবে। তার মানে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের বর্তমান হার যদি অব্যাহত থাকে তবে দেশের প্রায় ২৪ টি উপকূলীয় জেলা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমাদের উপকূলীয় জনসংখ্যার একটি মর্যাদাপূর্ণ পুনর্বাসন দাবি করা উচিত, আমাদের সন্তানদের জন্য অন্যতম প্রয়োজন গুণগতমানসম্পন্ন প্রযুক্তিগত শিক্ষা লাভ। আমি বৈদ্যুতিক কাজের মতো কারিগরি শিক্ষার প্রস্তাব করি এবং অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত দক্ষতা ভিত্তিক, কারিগরি শিক্ষা প্রচলন করার দাবি করতে পারি, এতে করে সাধারণ শিক্ষা থেকে ঝরেপড়া শিশু এবং যুবকরা আমাদের ক্রমবর্ধমান শহুরে এলাকাগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারবে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, উচ্চ মাধ্যমিক বা কলেজ স্তর শেষে ৫০% ড্রপ আউট রয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষাসহ পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে, যাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যাতে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা অনেককে দুবাই বিমানবন্দরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পরিবর্তে বিক্রয়কর্মীর চাকরি পেতে সহায়তা করবে। আমাদের মেয়েদের নার্স ও কেয়ারগিভার হিসেবে শিক্ষিত করার জন্য আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে আমাদের কন্যারা এবং বোনরা মধ্যপ্রাচ্যে সম্মান ও মানবিক আচরণ পেতে পারে।
আমাদের শহরগুলিতে পানীয় জল ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তনের দাবি জানাতে হবে, যাতে ঘরহারা উপকূলীয় মানুষজন যখন এখানে আসবে, তারা যাতে খাবার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ন্যূনতম সুবিধাটা পায়। বর্তমানে শহুরে বস্তিজীবন তাদের কাম্য হতে পারে না। সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, উপকূলীয় অঞ্চল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ২০০০ জন মানুষ ঢাকায় আসছেন। তাদের প্রত্যেকের জন্য একটি মানসম্পত জীবনযাপন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দরিদ্র এই মানুষগুলো, তারা আমাদের গৃহকর্মী বা ড্রাইভার যাই হোক না কেন, তারা আমাদের শহুরে জীবনের একটি অংশ। মনে রাখতে হবে যে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৮০% আমাদের বড় শহরগুলিতে বসবাস করবে।
কখনও কখনও শুধু জরুরি বাঁধের দাবিতে আমি সংশয় বোধ করি, কারণ এটি কিছু লোকের জন্য কিছু অবৈধ উপার্জনের সুযোগ তৈরি করেছে। আমাদের অবশ্যই পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংস্কারের দাবি তুলতে হবে। সংস্থাটির কর্মীদের জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনের কাছে ব্যবস্থাপনাগত জবাবদিহিতার সম্পর্ক নেই। এমনকি সাধারণ রক্ষণাবেক্ষণ বাজেটের জন্যও তাদের ঢাকা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের কার্যক্রমে কেন স্থানীয় সরকার অর্থাৎ ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে না। উপকূলীয় বাঁধ অবশ্যই উপকূলীয় বনায়নের সাথে একীভূত করতে হবে। শ্রীলঙ্কায়, জলোচ্ছ্বাস থেকে প্রথম সারির সুরক্ষা হিসাবে বাঁধের আগে তাদের অর্ধ কিলোমিটার বনায়ন রয়েছে। আমরা একবিংশ শতাব্দীর সমস্যাটি অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দিয়ে সমাধান করতে পারবো না, সংস্কারের প্রয়োজন তাই অপরিহার্য।
আমাদের নেতারা আমাদের হয়ত বারবার সন্তুষ্ট করতে আসবেন এবং আমাদেরকে হয়ত জানাবেন যে ডেল্টা পরিকল্পনা অনুযায়ী নেদারল্যান্ডসের মতো আমাদের একটি সুপার ডাইক থাকবে। তবে, আসলেই কি আমাদের এ বিষয়ক রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে? আমি এই বিষয়ে আমাদের আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করি। সুতরাং, আমাদের কেবল বেড়িবাঁধের দাবি করলেই হবে না, এতে করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীই উপকৃত হবে। আমাদেরকে ভাবতে হবে সামগ্রিক সমাধানের, সকলের মঙ্গলের। আর দাবি তুলতে হবে সে আলোকেই।
বাঁধই কেন হবে একমাত্র দাবি?
প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমরা উপকূলের মানুষ টেকসই বাঁধের দাবি করে আসছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শুধু বেড়িবাঁধ নয়, এর পাশাপাশি আমাদের আরও কিছু দাবিতে সোচ্চার হওয়া উচিৎ। একজন জলবায়ু কর্মী হিসেবে বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতেই মতামত পেশ করছি। প্রায়ই আমি বলি, ১০০ বছর পরে, সূর্যাস্তের সৌন্দর্য দেখতে আমাদের কক্সবাজারে না, চাঁদপুরে গেলেই চলবে। বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাস অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ তার মোট ভূমির এক তৃতীয়াংশ হারাবে। তার মানে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের বর্তমান হার যদি অব্যাহত থাকে তবে দেশের প্রায় ২৪ টি উপকূলীয় জেলা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমাদের উপকূলীয় জনসংখ্যার একটি মর্যাদাপূর্ণ পুনর্বাসন দাবি করা উচিত, আমাদের সন্তানদের জন্য অন্যতম প্রয়োজন গুণগতমানসম্পন্ন প্রযুক্তিগত শিক্ষা লাভ। আমি বৈদ্যুতিক কাজের মতো কারিগরি শিক্ষার প্রস্তাব করি এবং অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত দক্ষতা ভিত্তিক, কারিগরি শিক্ষা প্রচলন করার দাবি করতে পারি, এতে করে সাধারণ শিক্ষা থেকে ঝরেপড়া শিশু এবং যুবকরা আমাদের ক্রমবর্ধমান শহুরে এলাকাগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারবে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, উচ্চ মাধ্যমিক বা কলেজ স্তর শেষে ৫০% ড্রপ আউট রয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষাসহ পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে, যাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যাতে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা অনেককে দুবাই বিমানবন্দরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পরিবর্তে বিক্রয়কর্মীর চাকরি পেতে সহায়তা করবে। আমাদের মেয়েদের নার্স ও কেয়ারগিভার হিসেবে শিক্ষিত করার জন্য আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে আমাদের কন্যারা এবং বোনরা মধ্যপ্রাচ্যে সম্মান ও মানবিক আচরণ পেতে পারে।
আমাদের শহরগুলিতে পানীয় জল ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তনের দাবি জানাতে হবে, যাতে ঘরহারা উপকূলীয় মানুষজন যখন এখানে আসবে, তারা যাতে খাবার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ন্যূনতম সুবিধাটা পায়। বর্তমানে শহুরে বস্তিজীবন তাদের কাম্য হতে পারে না। সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, উপকূলীয় অঞ্চল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ২০০০ জন মানুষ ঢাকায় আসছেন। তাদের প্রত্যেকের জন্য একটি মানসম্পত জীবনযাপন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দরিদ্র এই মানুষগুলো, তারা আমাদের গৃহকর্মী বা ড্রাইভার যাই হোক না কেন, তারা আমাদের শহুরে জীবনের একটি অংশ। মনে রাখতে হবে যে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৮০% আমাদের বড় শহরগুলিতে বসবাস করবে।
কখনও কখনও শুধু জরুরি বাঁধের দাবিতে আমি সংশয় বোধ করি, কারণ এটি কিছু লোকের জন্য কিছু অবৈধ উপার্জনের সুযোগ তৈরি করেছে। আমাদের অবশ্যই পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংস্কারের দাবি তুলতে হবে। সংস্থাটির কর্মীদের জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনের কাছে ব্যবস্থাপনাগত জবাবদিহিতার সম্পর্ক নেই। এমনকি সাধারণ রক্ষণাবেক্ষণ বাজেটের জন্যও তাদের ঢাকা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের কার্যক্রমে কেন স্থানীয় সরকার অর্থাৎ ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে না। উপকূলীয় বাঁধ অবশ্যই উপকূলীয় বনায়নের সাথে একীভূত করতে হবে। শ্রীলঙ্কায়, জলোচ্ছ্বাস থেকে প্রথম সারির সুরক্ষা হিসাবে বাঁধের আগে তাদের অর্ধ কিলোমিটার বনায়ন রয়েছে। আমরা একবিংশ শতাব্দীর সমস্যাটি অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দিয়ে সমাধান করতে পারবো না, সংস্কারের প্রয়োজন তাই অপরিহার্য।
আমাদের নেতারা আমাদের হয়ত বারবার সন্তুষ্ট করতে আসবেন এবং আমাদেরকে হয়ত জানাবেন যে ডেল্টা পরিকল্পনা অনুযায়ী নেদারল্যান্ডসের মতো আমাদের একটি সুপার ডাইক থাকবে। তবে, আসলেই কি আমাদের এ বিষয়ক রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে? আমি এই বিষয়ে আমাদের আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করি। সুতরাং, আমাদের কেবল বেড়িবাঁধের দাবি করলেই হবে না, এতে করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীই উপকৃত হবে। আমাদেরকে ভাবতে হবে সামগ্রিক সমাধানের, সকলের মঙ্গলের। আর দাবি তুলতে হবে সে আলোকেই।
রেজাউল করিম চৌধুরী, ৩০ মে ২০২১
Leave a Reply