( জাগো কুমিল্লা.কম)
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর পিতৃসম্পত্তি তার বড়ভাই কর্তৃক লুটের পাঁয়তারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে- বরুড়া উপজেলার আড্ডা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধি আঃ আজিজ ( ডাক নাম আজিদা)।কৃষ্ণপুর গ্রামের মিয়াজি বাড়ির মৃত উজির আলীর ছোট সন্তান সে। জন্মের পর থেকে একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধি হওয়ার কারণে নানান অযত্ন অবহেলায় বেড়ে উঠে আজ সে ৪৫ বছরের একজন পুরুষ।
বাবা উজির আলীর মৃত্যুর পর অযত্ন বাড়তে বাড়তে একসময় শুরু হয় ছন্নছাড়া জীবনযাপনের। রাষ্ট্রীয় এবং শরীয়তের আইনানুযায়ী, পিতার মৃত্যুর পর তার সব সম্পত্তি পাবে মৃতব্যক্তির ছেলে এবং মেয়েগণ। আজিজের ভাইবোন সবাই সবার ভাগ বুঝে নিলেও প্রতিবন্ধি আজিজ জানে না সম্পত্তির প্যাঁচগোছ। সেই সুযোগে শুধু জাহানারা বেগম ছাড়া বাকি সবাই সবার সম্পত্তি বুঝে নিয়ে যায় ষোলোআনা। আজিজের বোন জাহানারা বেগম নিঃদাবী দিয়ে তার দুইভাইকে প্রাপ্য সম্পত্তি দলিল করে দেয়। এই সম্পত্তিও আজিজকে দেয়নি তার ভাই আঃ হাকিম। খতিয়ানসূত্রে প্রায় ১৭ শতাংশ জায়গা আজিজের নামে উল্লেখ থাকলেও গোটা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার পাঁয়তারার অভিযোগ পাওয়া গেছে আঃ হাকিম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।
পরিবারে তার তিন বোন এবং একমাত্র ভাইয়ের তত্ত-তালাশহীন জীবনে মেজো বোন জাহানারা আক্তারের তত্বাবধায়নে আশ্রয় জুটে জাহানারার স্বামী বাড়ি উপজেলার নলুয়া গ্রামে। বোনের বাড়িতে গ্রামের লোকজনের ক্ষেত খামারে কাজ করে জীবিকা চালাতে গেলে আজিজের গ্রামের লোকজন তার বড়ভাই আঃ হাকিমকে কে চাপ দেয় তার দায়ভার নেওয়ার জন্য।
গ্রামবাসীদের চাপে বড়ভাই আঃ হাকিম, আজিজ (আজিদাকে) খুব ছোট একটি চাপা টিনের ঘর করে দেয়, যা গ্রামের অন্যান্য মানুষদের পাকের ঘরের সমান। কিছুদিন পর স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে কথিত এক নারীকে দিয়ে বিয়ের নাটক সাজিয়ে কয়েকদিন পর আবার সেই বিয়ে ভেঙে দেয় এবং বিয়ে ভাঙার অজুহাতে নিরক্ষর আজিজ থেকে টিপসই দিয়ে হাতিয়ে নেয় পিতৃসম্পত্তির অনেকটা। শুধ তাই নয়, ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি লুটে নিতে উঠে পড়ে লাগে তার বড়ভাই আঃ হাকিম ও তার পরিবার।
একের পর এক কাণ্ড করে আজিজকে উচ্ছেদ করার জন্য। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আজিজ সেসব সৈহ্য করতে না পেরে পুনরায় পাড়ি জমায় বোনের বাড়ি নলুয়ায়। এবার এসে আগেরকার মতো কাজকর্ম করতে আগ্রহ দেখালেও তার ভাগ্যে কর্ম জুটতো কম, কেননা শারিরীক শক্তিতে পিছিয়ে থাকা আজিজকে কর্মে নেবেই বা কে? তবু ভাগিনাদের তত্ত তালাশে মোটামুটিভাবে জীবন চলছিল। আজিজ তার বোন এবং ভাগ্নেদের বিয়ের জন্য উঠতে বসতে বলে। আজিজের মাথায় বিয়ের ভূত চেপে বসলে তার ভাগিনারা কুমিল্লা টাওয়ার হসপিটালে এনে তার পুরুষত্বের পরীক্ষা করে তার ফলাফল ইতিবাচক পাওয়ার পর তাকে পেরপেটি গ্রামে বিয়ে করায়। তার বর্তমান স্ত্রীর নাম সীমা আক্তার। সে এখন চারমাসের গর্ভবতী বলে জানায় সীমা। এমন খবর বাড়িতে প্রকাশ হওয়ার পর আঃ হাকিমের পরিবার আবারো তাকে স্বস্ত্রীক উচ্ছেদে উঠেপড়ে লাগে।
আজিজের স্ত্রী সীমা আক্তার প্রতিবেদককে জানায়- দুবছর হলো আমার বিয়ে হয়েছে, এই দুই বছরে আমার উপর নানান ঝড় তুফান বয়েছে। আমি অন্তস্বত্তা এই খবর পাওয়ার পর থেকে আমাকে এবং আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে বের করার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে আমার ভাসুর আঃ হাকিমের বড় ছেলে ইকবাল। আমি বের হয়ে যাই না দেখে আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়, আমাকে রোহিঙ্গা বলে গালিগালাজ করে, রাতের বেলায় ঘরের চালায় ঢিল ছুঁড়ে, ঘরে চোর ঢুকিয়ে দিয়ে মালামাল লুট করে । কিছুদিন আগে ইকবাল আমাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিলে আমি ভয়ে আমার বাবার বাড়ি চলে যাই। বর্তমানে আমি আমার বাবার বাড়ি আছি। থানায় কোনো অভিযোগ করেন না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে সীমা জানায়- আমার স্বামী একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধি, তাছাড়া আমার ভাসুরের ছেলে ইকবাল স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে চলাফেরা করে, সে প্রতিনিয়ত আমাকে ভয় দেখায়, তাই আমি মামলা মোকদ্দমা করি না ভয়ে। এই বিষয়ে জানতে আজিজ (আজিদার) বড়ভাই আব্দুল হাকিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি সমস্ত বিষয় অস্বীকার করে উল্টো সাংবাদিককে এই বিষয়ে নাক না গলানোর জন্য হুমকি দেন। তার কিছুক্ষণ পর আঃ হাকিমের ছেলে ইকবালও ফোন করে সংবাদকর্মীকে বিভিন্ন নেতার সাথে চলাফেরা করে বলে জানায়।
Leave a Reply