(অমিত মজুমদার,কুমিল্লা)
নারায়নগঞ্জের কলেজ ছাত্র রাকিবের সাথে ফেসবুকে পরিচয় । অত:পর বন্ধুত্ব – প্রেম- ভালবাসা। সেই তরুণীর অনুরোধে দুই বন্ধুসহ কুমিল্লা ছুটে আসে রাকিব। কুমিল্লা ধর্মসাগর পাড়ের শেষ প্রান্তে গাছের আড়ালে একসাথে বসে জুটিয়ে প্রেম আলাপ করছে। পাহারায় ছিল অপর দুই বন্ধু।
সোমবার সকালে উক্ত স্থানে হঠাৎ করেই হাজির হয় কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: ফজলে এলাহী। অত:পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। । ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর স্থানীয় সাংবাদিক ও ভ্রাম্যমান আদালতের টিমের কাছে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয়। তিনটি ছেলের সাথে একটি মেয়ে কোন প্রকার অপরাধমূলক কর্মকান্ড যেন না ঘটাতে পরে সেই জন্য পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ভ্রাম্যমান আদালত টিম।
প্রেমিক রাকিবসহ বন্ধুদের পরিবারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তবে সেই তরুণীকে জিজ্ঞেস করলে তার বাড়ি একবার বলছে কক্সবাজার একবার বলছে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ। তরুনীর বাবা-মা’র সাথে কথা বলতে চাইলে সে মতলব থানার এক এসআইকে ফোন ধরিয়ে দেয়। তখন ম্যাজিস্ট্রেট ফজলে এলাহী সেই এস আইকে বলেন, আমি ছেড়ে দেওয়ার পর পরবর্তীতে কোন প্রকার অপরাধ মূলক ঘটনা ঘটলে আপনি সেই দায় নিবেন কি ? এমন প্রশ্নে সেই এস আই বলেন, আমি তাকে একসময় প্রাইভেট পড়িয়েছি, আমি দায় নিতে পারবো না।
অত:পর সেই মেয়েটির কাছে বাবার নাম্বার চাওয়ায় সে একটি বন্ধ নাম্বার ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয় এবং সে কোন প্রকার আত্মীয় স্বজনদের নাম্বার চাওয়াতে সে দিতে রাজি হচ্ছে না। উল্টা নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জোর গলায় কথা বলতে থাকে। মেয়েটির সাহস দেখে স্থানীয়রা অবাক হয়ে যায়। মেয়েটি যত তথ্য দিচ্ছে সব গুলো ভুল এমনটা সন্দেহ হচ্ছে স্থানীয় সবার।
মেয়েটির পরিচয় কোন ভাবে শনাক্ত করতে না পেরে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকে ভ্রাম্যমান আদালত টিম। অত:পর স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: ফজলে এলাহী সিদ্ধান্ত নেন মেয়েটির পরিচয় শনাক্ত করা খুবই প্রয়োজন। এখন ছেড়ে দিলে মেয়েটি সাথে যে কোন ধরনের অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড ঘটনা ঘটতে পারে।
অবশেষে সাংবাদিকসহ মেয়েটিকে ভ্রাম্যমান আদালতের গাড়ি করে পরিচয় শনাক্ত নেমে পড়ে। প্রথমে তার তথ্য মতে সদর দক্ষিণ যায়, সেখানে তার পরিচয় শনাক্ত করতে না পেরে তাকে আবারও জিজ্ঞেস করা হয় বাড়ি কোথায় ! তখন সে বলে ভুশ্চি বাগমারা। পরবর্তীতে ভ্রাম্যমান আদালতের টিম ছুটে যায় লালমাইয়ের দিকে। মেয়েটি সঠিক ঠিকানা না দেওয়ায় নিয়ে যাওয়া হলো লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট।
অতপর সেই তরুণীকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন সে বলে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে । বাবা কক্সবাজার থাকে। তখন তার বাবার নাম্বার চাওয়া হয়। সেই মেয়েটি তখন বন্ধ নাম্বারটি আবার দেয়। তখন নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে জেলে প্রেরণের (সেইভ হোম) সিদ্ধান্ত নিলে মুখ খুলতে শুরু করে । তখন সে বলে তার বাড়ি বাতাবাড়িয়া গ্রামে।
তখন নির্বাহী কর্মকর্তা সকল ইউনিয়নের গ্রামের তালিকা থেকে বাতাবাড়িয়ে গ্রাম বের করে। অতপর বেলঘর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সেই তরুনীর পিতার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে। তখন পিতার সাথে মোবাইলে কথা বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মেয়েটির সকল প্ল্যান ব্যর্থ হওয়ায় কান্না শুরু করে। অতপর মুচলেকা দিয়ে সেই মেয়েটিকে তার বাবার কাছে পেঁৗছে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: ফজলে এলাহী বলেন, মেয়েটির আচার-আচরণ প্রথম থেকে সন্দেহজনক ছিল। নারায়ণগঞ্জের তিনটি ছেলে যেন কোন প্রকার অপরাধমূলক কর্মকান্ড না ঘটাতে পারে সেই জন্য মেয়েটিকে পরিবারের কাছে পেঁৗছে দেওয়া খুবই প্রয়োজন ছিল।
মেয়েটি প্রথম থেকে আমাদের ভুল তথ্য দিতে থাকে। দীর্ঘ ৫ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেও একের পর এক ভুল তথ্য দিয়ে সাংবাদিকসহ আমাদের হয়রানি করে। পরবর্তীতে ৫ ঘন্টার পর সে তার গ্রামের নাম বলার পর লালমাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগীতায় মেয়েটিকে পরিবারের কাছে পেঁৗছে দিয়েছি। মেয়েটি আমাদের বার বার বোকা বানানো চেষ্টা করেছে। জনগনের নিরাপত্তার সার্থে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। যার এটি একটি অন্যান্য উদাহরণ। পরবর্তীতে প্রেমিক রাকিবসহ দুই বন্ধুকে নারায়নগঞ্জ থেকে তার পিতা মাসুদ কুমিল্লা এসে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
Leave a Reply