অনলাইন ডেস্ক:
প্রাথমিক শিক্ষা কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। গত ১০ বছর ধরে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা এক বছর মেয়াদি থাকলেও আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে দুই বছর মেয়াদি হচ্ছে। এ ছাড়া এত দিন প্রাক্-প্রাথমিকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হলেও এখন থেকে চার বছরের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে। প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার এসব পরিবর্তনের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠালে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এতে স্বাক্ষর করেছেন। জানা গেছে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই সরকার দুই বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করবে। প্রথম দফায় সারা দেশে ২ হাজার ৫৮৩ স্কুলে এটি চালু করা হবে। ক্রমে আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হবে।
তথ্যমতে, ২০০৮ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা অনুমোদন করে। ২০১০ সাল থেকে সীমিত আকারে ও ২০১৪ সাল থেকে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের অধিক শিশুদের প্রাক্-প্রাথমিকে ভর্তি করা হচ্ছে। প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাই আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম সোপান হিসেবে শিশুদের পরবর্তী শিক্ষার সঙ্গে মানসিক ও ভাষাগত মেলবন্ধন সৃষ্টি করে।
মন্ত্রণালয়সূত্র বলছেন, প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের ফলে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার কমেছে। প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার, সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও সমাপনীতে পাসের হারও বেড়েছে প্রাক্-প্রাথমিকের কারণেই। এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০১০-এ পর্যায়ক্রমে চার বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য দুই বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা ২০৩০-এও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ অনুযায়ী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক কর্মপরিকল্পনায় প্রাক্-প্রাথমিক স্তর এক বছর থেকে দুই বছরে উন্নীতের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এসবের বাস্তবায়ন হিসেবেই চার বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য দুই বছর মেয়াদি হচ্ছে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা। জানা গেছে, ইউনেস্কোর ২০১৬ প্রতিবেদন অনুযায়ী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর ৫২ শতাংশ দেশে তিন বছর মেয়াদি ও ৩৩ শতাংশ দেশে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে। মন্ত্রণালয়সূত্র বলছেন, দেশে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিক চালু না থাকায় শহর ও গ্রামে বেসরকারি উদ্যোগে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রসার ঘটেছে। এতে শিক্ষার অসম প্রতিযোগিতা ও বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা গেছে, দেশে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে ৩৪ হাজার ৭৯৯টিতে প্রাক্-প্রাথমিকের জন্য নির্ধারিত শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। ৩৭ হাজার ৬৭২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক্-প্রাথমিকের জন্য একজন করে সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। এ ছাড়া আরও ২৬ হাজার ৩৬৬টি বিদ্যালয়ে নতুন করে প্রাক্-প্রাথমিকের জন্য একজন করে সহকারী শিক্ষকের পদ সৃজন করা হয়েছে। এসবের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি বিদ্যালয়ে চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে।
এদিকে জানা গেছে, গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই) থেকে ৫৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান পাওয়ার কথা রয়েছে। এ অর্থ প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলনে ব্যয় করার কথা ভাবছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। দুই বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিক চালুর ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি (দুই বছরের মধ্যে) ও দীর্ঘমেয়াদি (তিন-চার বছরের মধ্যে) পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মাধ্যমে চার বছর বয়সী শিশুদের জন্য শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হবে। অবকাঠামোগত বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ক্লাস্টারে একটি করে মোট ২ হাজার ৫৮৩টি সরকারি বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলন করা হবে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় তিন থেকে চার বছরের মধ্যে সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিক বাস্তবায়ন করা হবে। চার বছর বয়সী প্রাক্-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের অধিকতর যতেœর জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে যত্নকারী কর্মী বা আয়া নিয়োগ করবে সরকার।
Leave a Reply