অনলাইন ডেস্ক:
কামরুল হাসান চৌধুরী (ফাহিম)। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম। নিছক রোমাঞ্চের টানেই মোটরসাইকেল নিয়ে নানা রকম কসরত (স্টান্ট) করেন তিনি। দেশের বাইক স্টান্টারদের মধ্যে তিনি এখন তারকা বনে গেছেন। অনেকের কাছে তিনি অনুপ্রেরণার উৎসও বটে। এসব ছোট ছোট খুশির খবরই স্বপ্ন দেখাচ্ছে ফাহিমকে। এখন তিনি ওয়ার্ল্ড মোটরবাইক স্টান্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে চান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোটরসাইকেল স্টান্ট চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়। সেসব আয়োজনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চান তিনি।
তবে সাইকেল ফাহিম থেকে এই পর্যায়ে আসার নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘ গল্প।
২০১৫ সালে আপনাকে সাইকেল ফাহিম নামে চিনতো। সাইকেল স্টান্ট করার শুরুর গল্পটা প্রথমে জানতে চাই-
কামরুল হাসান চৌধুরী: মোহাম্মদপুরে আমরা তিন বন্ধু মিলে তখন সাইকেল স্টান্ট গ্রুপ খুলি। নাম দিই ‘মোহাম্মদপুর সাইকেল ভাইপার্জ’। ধীরে ধীরে আমাদের মেম্বার বাড়তে থাকলো। একেকদিন একেক জায়গায় স্টান্ট করতাম আমরা। তখন থেকেই আসলে সাইকেল ফাহিম নামে আমার পরিচিত বাড়তে থাকে। অনেকে আমাদের বাই-সাইকেল কসরত দেখে গালামন্দও করতো। বখাটে তকমাও পেয়েছি সাইকেল স্টান্ট করতে গিয়ে। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য তো সৎ ছিল। আমরা জানতাম, আমাদের পরিকল্পনা কী ছিল!
এরপর বাইক নিয়ে নতুন অধ্যায় শুরু করলেন। সেটা কীভাবে? এবং তখনো কি ভেবেছিলেন এত জনপ্রিয়তা পাবেন?
কামরুল হাসান চৌধুরী: এর পেছনে একটি মর্মান্তিক কাহিনী রয়েছে। আমরা তখনও সাইকেল স্টান্ট করতাম। আমার বন্ধু রাকিব তখন অনেক ভালো বাইক স্টান্ট করতো। ওই সময় তাকে আমরা হারাই। এরপর থেকে তার স্বপ্নপূরণ করতে আমি, আমার বন্ধু ও এলাকার ছোট-বড় ভাইয়ের মিলে বাইক স্টান্ট শুরু করি। সেই থেকে শুরু।
নিশ্চয়ই বাইক রাইডার হতে অনেক পরিশ্রম ও বাঁধা পেরোতে হয়েছে। সে প্রসঙ্গে যদি বলতেন…
কামরুল হাসান চৌধুরী: রোমাঞ্চের টানেই মোটরসাইকেল নিয়ে নানারকম কসরত (স্টান্ট) করি। তবে এখনো আমি সফল না। হয়তো আপনাদের অনেকের কাছে আমি তারকা স্টান্টার। কিন্তু সব জায়গায় আমাদের ওভাবে টেক-কেয়ার করা হয় না। বাংলাদেশে হয়তো আরো সময় লাগবে। কিন্তু আপনারা পাশে থাকলে সম্ভব। তখন নিজেদের সফল বলে দাবি করতে পারবো।
হুইলি, স্টপি, রোলিং স্টপি, চেইন স, বার্ন আউট, অন সাইড স্কিচ, হাইচেয়ার, হিউম্যান কম্পাস, সুইসাইড বার্ন আউট, ডোনাটের মতো কঠিন সব স্ট্যান্ট আপনার মুখস্ত। যা দেখে মানুষ চমকে যায়, হাততালি দেয়। যখন চারপাশের মানুষ এত উৎসাহ দেয়, তখন আপনাদের অনুভূতি কেমন থাকে?
কামরুল হাসান চৌধুরী: অনেক ভালো লাগে এই বিষয়টা। ওদের জন্যই আমি একটু হলেও শান্তি পাই। তবে খারাপ লাগে রাস্তায় অনেক মানুষ দেখলে, কারণ ওদের কষ্ট হয়। কোনো একদিন ঢাকার রাস্তায়ও স্বাচ্ছন্দে স্টান্ট করতে পারবো, সেই আশা আছে। তখন ফ্যান বা অন্যান্যদের কষ্ট হবে না।
তবে সমাজের একটা অংশ এখনো বাইক রাইডারদের কটু চোখে দেখে। এটা অবশ্য গ্রামাঞ্চলে বেশি। এ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী? বা তাদের উদ্দেশ্যে কী বলতে চান?
কামরুল হাসান চৌধুরী: হয়তো তারা ভালো মতো বিষয়টা জানে না, তাই কটু চোখে দেখে। ওরা আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ড বা ফ্যামিলি সম্পর্কে জানলে এমনটা আর হয়তো ভাববে না। তবে হ্যাঁ, একটা অংশ অংশ আছে যে গ্রুপিং বা লেইম কাজ করে বেড়ায় রাস্তার মধ্যে।
যারা বাইক স্ট্যান্ট করতে চায়, তাদেরকে আপনি কোন পরামর্শটুকু দিতে চান?
কামরুল হাসান চৌধুরী: সবাইকে প্রথমেই বলবো, সেইফটি ফার্স্ট। এর জন্য ভালো মানের হেলমেট ও সেফটি গার্ড প্রয়োজন। তারপর আস্তে আস্তে ডেভেলপ করতে থাকো। ইনশাল্লাহ্ সফলতা আসবেই।
বাইক স্ট্যান্ট নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
কামরুল হাসান চৌধুরী: পোল্যান্ড যাওয়ার অনেক ইচ্ছে, তা মেবি সম্ভব হচ্ছে না। তবে কেমন হয়, যদি পোল্যান্ডের নামটা সরিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে চাই? আপনারাই জানাবেন, কারণ আপনাদের কারণেই এতদূর আসতে পেরেছি।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ
Leave a Reply