অনলাইন ডেস্ক:
মাগুরা শহরের ভায়নায় ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত মৎস্য বিভাগের চিংড়ি উৎপাদন খামার দুই বছর ধরে নিষ্ক্রিয় রয়েছে। পানি ছাড়াই খাতা-কলমে এটিকে সচল দেখিয়ে দুই লাখ বাচ্চা (পোস্ট লার্ভা) উৎপাদনসহ তা চাষিদের কাছে বিক্রি দেখানো হয়েছে। এমনকি এই উৎপাদনের বিপরীতে দুই লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেখানো হয়েছে।
এ বছরের শুরুতে লবণাক্ত এলাকার মানুষের সুপেয় পানি সরবরাহ ও সংরক্ষণের জন্য প্রযোজ্য সাতটি পুকুর প্রকল্প মাগুরায় এনে প্রায় আড়াই কোটি টাকার দফারফা করেছিল মাগুরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তা নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে কালের কণ্ঠে ‘গায়েবি পুকুর’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, স্বাদু পানির চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালে মাগুরায় চিংড়ির লার্ভা উৎপাদনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। ভায়নায় জেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের সীমানার মধ্যে চার হাজার বর্গফুট আয়তনের হ্যাচারির নির্মাণকাজ করেন যশোর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মোস্তাক।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হ্যাচারির প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। অবকাঠামোর ভেতরে বিভিন্ন উপকরণ পড়ে আছে। ভবনে আলো-বাতাস নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন করেনি। হ্যাচারির উপযোগী থ্রি ফেজ বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। স্থাপিত হয়নি ওভারহেড পানির ট্যাংক, শক্তিশালী সাবমারসিবল পাম্প। এসব কারণে এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। অথচ টিনশেডে নির্মিত ইটের দেয়ালঘেরা হ্যাচারির নির্মাণ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৭৮ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এত টাকা ব্যয়ে হ্যাচারিটি স্থাপন করা হলেও এটি পোস্ট লার্ভা উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত নয়। এর প্রধান কারণ লবণাক্ত পানির অপ্রতুলতা। তবু এখানে প্রতিবছর এক লাখ চিংড়ির লার্ভা উৎপাদন বাধ্যতামূলক করে সরকারিভাবে বছরে ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। যাচাই না করে হ্যাচারি স্থাপন করায় ঠিকাদার এবং প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও প্রকৃত মৎস্য চাষিদের কোনো কাজে আসেনি।
স্থানীয় চিংড়ি চাষি আবুল বরকত জানান, হ্যাচারিটি নির্মাণের কথা শুনে স্বল্পমূল্যে চিংড়ি লার্ভা পাওয়ার ব্যাপারে জেলার ১১৫ জন চিংড়ি চাষি আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু এটি কোনো কাজে আসছে না। তাঁদের অনেক টাকা খরচ করে দূর থেকে লার্ভা আনতে হচ্ছে। শুধু ঠিকাদারের স্বার্থে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মাগুরা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম চিংড়ি লার্ভা উৎপাদনের বিপরীতে দুই লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করার কথা স্বীকার করেছেন। তবে নিষ্ক্রিয় হ্যাচারিতে কিভাবে লার্ভা উৎপাদন ও বিক্রি হয়—সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রকল্পের অ্যাকুয়াকালচার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান বলেন, ‘প্রকল্পের নকশায় বিদ্যুৎ, ট্যাংকি কিংবা পাম্পের কথা উল্লেখ নেই। অন্যদিকে মাগুরা লবণাক্ত এলাকা না হওয়ায় সেখানে পানির অপ্রাপ্ততার কারণে সেটি চালু করা যায়নি।’
মাগুরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আশিকুর রহমান বলেন, ‘অবকাঠামোগত অসম্পূর্ণতার পাশাপাশি জনবল সংকট প্রকট। এ কারণে খামারের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
Leave a Reply