নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বাসিন্দা প্রবাস ফেরত ৪০ বছর বয়সী মৎস খামার ব্যবসায়ি আশরাফ আহমেদ সুমন, পুলিশ সদস্য রাহেজুল আমিন বাধন (২৬) ও সজিবকে (২৪) কিশোর গ্যাংয়ের মূল হোতা, মাদক ব্যবসায়ি ও চাদাঁবাজ উল্লেখ্য করে মানববন্ধন করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে মৎস খামার ব্যবসায়ি আশরাফ আহমেদ সুমন ও তার পরিবার।
তারা বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ি। আমরা বঙ্গবন্ধুর আর্দশের রাজনীতি করি। সন্ত্রাসী ও চাদাঁবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে একটি অপশক্তি অপপ্রচারে ব্যস্ত। তারা চায় আমাদের ব্যবসাবাণিজ্য ও বাড়িঘর দখল করতে। এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের মূলহোতা তারাই, যারা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে । সন্ত্রাসীদের ভয়ে বৃদ্ধ মা-বাবা ছাড়া সবাই এখন ছোট বাচ্ছাদের নিয়ে ঘর ছাড়া, আমরা এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০ টায় কুমিল্লা নগরীতে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মৎস খামার ব্যবসায়ি আশরাফ আহমেদ সুমন ও তার পরিবার। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন আশরাফ আহমেদ সুমনের স্ত্রী আয়েশা আক্তার , সুমনের পিতা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আলী আহমেদ সরকার, সুমনের মাতা রোকেয়া বেগম, পুলিশ সদস্য বাধনের স্ত্রী আখি আক্তার প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে মৎস খামার ব্যবসায়ি আশরাফ আহমেদ সুমন বলেন, আমার ভাই রাজিব হোসেন (৩৮) একজন সেনাবাহিনীর সদস্য, ছোট ভাই বাধন একজন পুলিশ সদস্য, ছোট ভাই সজিব (২৪) আমার সাথে মাছের খামারে ব্যবসা করে, ছোট ভাই সোহেব (২১) ঢাকার রাজউক কলেজ থেকে পাশ করে এখন আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে।
আমাদের গ্রামের পাশের বাড়ির অধিবাসী পুলিশের এএসআই ফরহাদ একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার গাড়ি চালক। ফরহাদের বাবা হারুন মিয়া স্থানীয় বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচিত। এলাকার অধিকাংশ লোক জামাত-বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় বাশরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ৭০ ভোট পড়ে নৌকা প্রতীকে। আমাদের পরিবার এবং আমাদের কিছু আত্মীয়-স্বজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আমি উপজেলা যুবলীগের সদস্য। রাজনৈতিক কারনে পুলিশের এএসআই ফরহাদের পরিবারের সাথে পূর্ব থেকেই আমাদের বিরোধ চলে আসছিল। এছাড়া ফরহাদের বাড়িতে আমার বাবার মামার বাড়ি। প্রভাব খাটিয়ে বাবার মামাদের সম্পত্তি দখল করে রাখে ফরহাদের পরিবার। এই সম্পত্তি নিয়েও ফরহাদের পরিবারের সাথে আমাদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এইসব বিরোধকে কেন্দ্র করে এএসআই ফরহাদ এবং তার বাবা-ভাই আমাদের সাথে চরমভাবে শত্রুতা ও নানা ষড়যন্ত্র করে আসছিল।
বাশরা গ্রামের অধিবাসী মাছের খামার ব্যবসায়ি আলী মিয়াজী। একই ধরনের ব্যবসা করায় আলীর সাথে আমাদের ব্যবসায়িক বিরোধ থাকায় এই আলীকে নিয়ে এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে এএসআই ফরহাদ। এই বাহিনীর অপর সদস্যরা হলেন ইলিয়টগঞ্জ (দ:) ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান হত্যা মামলার আসামী মাদক ব্যবসায়ি আকমুল। ফরহাদের চাচাতো ভাই সুদের ব্যবসায়ী সাদ্দাম। রাজাকার এরশাদের পুত্র বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্য গোলাম মোক্তাদির। এই গোলাম মোক্তাদির পুলিশে চাকুরিরত অবস্থায় গুলি করে সহকর্মীকে হত্যা করে। লখাইতলী গ্রামের সোলেমান, বাশরার মানিক, জুয়ারি আমিন, হুমায়ুন চৌধুরী ও রাসেলসহ এলাকার অনেক বখাটে মাদকসেবীকে নিয়ে এই সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে ফরহাদ।
দাউদকান্দি উপজেলা হেফাজতের সেক্রেটারী মাও. আব্দুর রহিম চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল তার ফেসবুকে সরকার বিরোধী পোষ্ট দেয়। এ বিষয়ে স্থানীয় ছাত্রলীগের সাথে মাওলানা আব্দুর রহিমের হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয় ফরহাদ। পরে রাসেল নামের এক বখাটে যুবককে দিয়ে আমাদের নামে চাঁদাবাজীসহ মিথ্যা তথ্যে থানায় অভিযোগ দায়ের করায় ফরহাদ। ফরহাদের চক্রান্তে গত ২৪ এপ্রিল দাউদকান্দি থানার এসআই ওমর ফারুক এবং এএসআই আলমগীরসহ পুলিশের একটি দল আমার বাড়িতে যায়। এই রাসেল আমার ভাই বাধনের মোবাইলে ভীতিজনক বিভিন্ন প্রকার ম্যাসেজ ও ভয়েস রেকর্ড পাঠিয়েছে। ফরহাদ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা তাদের ফেসবুকে আমাদের নামে মানহানিকর ও মিথ্যা তথ্যে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। আমার ভাইয়ের মোবাইল থেকে সেগুলো তদন্তকালে স্বাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করি এবং এ ঘটনায় রাসেলের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করি।
এর পরদিন ২৫ এপ্রিল আমার ভাই বাধনের নাম জড়িয়ে দাউদকান্দি থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলাটির বাদী মালিগাঁও ইউনিয়নের লখাইতলী গ্রামের অধিবাসী আফিজ উদ্দিনের পুত্র সোলেমান। এই সোলেমান ফরহাদ-আলী সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য। আমরা পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে, সোলেমানের সাথে তার নিজ বাড়ির বিল্লাল নামের একজনের সাথে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে তাদের বাড়িতে দুই পক্ষের মাঝে মারামারি হয়। মারামারির পর ফরহাদ ও আলী প্রায় অর্ধশত সন্ত্রাসী নিয়ে লখাইতলী গ্রামে গিয়ে সোলেমানের প্রতিপক্ষ বিল্লালের উপর হামলা করে। আবার সোলেমানকে দিয়ে বিল্লালের বিরুদ্ধেই দাউদকান্দি থানায় মামলা করায় ফরহাদ। এই মামলার আসামীর তালিকায় নাম দেয়া হয় আমার ভাই পুলিশ সদস্য বাধনকে। এই মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধিন। আমার ভাই বাধনকে চাকুরিচ্যুত করতেই ষড়ন্ত্রমূলকভাবে এই মামলায় জড়ায় বাধনকে।
বাধন চাকুরি করাকালীন কুমিল্লার পুলিশ সুপার এবং রাঙামাটি পুলিশ সুপার বরাবর বিভিন্ন লোকের নাম ব্যবহারে একাধিক মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করায় ফরহাদ। তদন্তে এইসব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হয়।
এএসআই ফরহাদ, আলী মিয়াজী, হুমায়ুন চৌধুরী, সাদ্দাম গং এর ষড়যন্ত্রে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি ও জানমালের ক্ষয়-ক্ষতির ভয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আমার বৃদ্ধ পিতা ও মাতা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সকল সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজন এখন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর কয়েক দফা হামলা করেছে, সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে, আমাদের মাছের খামারের মাছ লুটে নিয়েছে, মাছের খামারে একাধিক বার বিষ প্রয়োগ করেছে। এসব ঘটনায় আমরা দাউদকান্দি থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা খবর পেয়েছি যে, দাউদকান্দি উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পুটিয়া নামক এলাকায় গত ১৬ আগস্ট এই চক্রান্তকারী সন্ত্রাসীরা আমাদের নামে মিথ্যা তথ্যে মানববন্ধন করেছে এবং গত ১৭ আগস্ট রাতে দাউদকান্দি থানায় আমাদের নামে আরো কয়েকটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে। এই সন্ত্রাসী বাহিনী ছাড়া এলাকার অপর কারো সাথে আমাদের কোন বিরোধ নাই। আমরা এই ভয়ংকর সন্ত্রাসীচক্রের কবল থেকে মুক্তি চাই।
আশরাফ আহমেদ সুমনের পিতা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আলী আহমেদ সরকার ও মাতা রোকেয়া বেগম বলেন, আমরা দুইজন ঘরে থাকি। আমার ছেলেরা, তাদের স্ত্রী ছোট শিশু সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। তারা এখন ঘরছাড়া। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা বাড়িতে আসছে না।
পুলিশ সদস্য বাধনের স্ত্রী আখি আক্তার বলেন, সারাদিনরাত আমাদের হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। উত্যক্ত করছে। তাই ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসছি।
Leave a Reply