অনলাইন ডেস্ক::
উপজেলা প্রকৌশলী মৃত মামুনুর রশিদের চার কন্যার মধ্যে কনিষ্ট কন্যা, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী আনিকার প্রান ঝড়লো ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে,পাঁচ মাসের মধ্যে পিতা-কন্যা দুই জনই মৃত্যু।
বাবাকে খুব ভালবাসতেন আনিকা, মৃত্যুপর ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাবাকে বলেন, তুমি এসে আমায় যাও নিয়ে, তোমার ঐ দেশে। আদরের মেয়ের কথা রেখে দিলেন বাবা। সত্যি সত্যি নিয়ে গেলেন বাবার দেশে।
বাবাকে নিয়ে আনিকার কবিতাটি হুবুহু তুলে ধারা হলো
এ ধরণীতে কার কাছে রেখে গেলে বাবা তোমার আদরের সাত রাজার ধন?
তোমার জন্য কেঁদে কেঁদে, দুচোখের জল শুকিয়ে
যেতে চাইছে বেরিয়ে প্রাণ।
তুমি এমন করে দেবে ফাঁকি বুঝিনিতো আমি,
মরণ ক্ষণে শেষ কথাটাও বললেনা বাবা তুমি।
কি অভিমান জমিয়ে বুকে, চলে গেলে না ফেরার দেশে?
ও বাবা ‘সব অভিমান ভুলে আসবে ফিরে কী সে?
ও বাবা বাবা কি কারণে শেষ দেখাটাও দিলেনা আমায়?
একটু কী প্রাণপাখি টারে ধরে রাখতে পারলে না?
শেষ দেখা না হয় দেখতাম তোমায়।
মানতে পারছি না আজ বিধির বিধান,কেনও সৃষ্টি করে কেনো’ই বা কেরে নেয় প্রাণ?
ওবাবা কোথায় গেলে, তুমিহীন শূন্য এ বাড়ি,
তুমি এসে আমায় যাও নিয়ে, তোমার ঐ দেশে,
লক্ষ্মী বাবা আমার আর করেনা আড়ি।
দেখো তোমার খুকু আসছে ফিরে,নাও না বুকে তুলে
কেমন ঘুমান ঘুমিয়ে আছো, গেছো কী আমায় ভুলে?
ও বাবা বাবা দেখো না চোখ খুলে, ডাকছে তোমার খুকু
তোমার ঘরের কোনে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে বিধির কাছে চাইছে ক্ষমা,
ও বিধি আমার বাবা কে
করো ক্ষমা…! ?
আনিকার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিল ঘাতক বাস
কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ঢাকার ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আনিকা আক্তার তাহসিন (২২) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ওই বাসের অন্তত ১০ যাত্রী। বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ওই মেডিকেল ছাত্রী কুমিল্লা নগরীর ২য় মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত প্রকৌশলী মামুনুর রশিদের মেয়ে।
হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কুমিল্লা অভিমুখি রয়েল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জের টামটা এলাকায় আসার পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের একটি ডোবায় পড়ে যায়। এসময় বাসে থাকা অন্তত ১২জন যাত্রী আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মেডিকেল ছাত্রী আনিকা আক্তার তাহসিন (২২) ও জেলার বুড়িচং উপজেলার মিথিলাপুর গ্রামের মৃত সফিকুর রহমানের মেয়ে রৌশন আরা (৫০)কে মৃত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যায় ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে ফাঁড়ীর ইনচার্জ মো. মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত আনিকা আক্তার তাহসিন ঢাকার ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ এর ছাত্রী। এছাড়া আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক।
এদিকে রাতে আনিকার মরদেহ বাড়িতে আনার পর স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মরদেহ দেখতে আনিকার আত্বীয়-স্বজন, সহপাঠিসহ এলাকার শোকার্ত লোকজন বাড়িতে ভীড় জমায়। স্থানীয়রা জানান, ৫ বোনের মধ্যে সে ছিল সবার কনিষ্ঠ ছিল খুব মেধাবী। ৫ মাস আগে আনিকার বাবা প্রকৌশলী মামুন মারা যান।
তাই ওই পরিবার একটি শোক কাটিয়ে না উঠতে আজ সবার আদরের কনিষ্ট আনিকাকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ পুরো পরিবার। তার বড় বোন তাননিয়া আল নিসা জানান, বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল আনিকা একজন বড় ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবায় কাজ করবে, কিন্তু একটি দুর্ঘটনা আমাদের পরিবারের সকল স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। শুক্রবার বাদ জুম্মা এলাকায় নামাজে জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে।
Leave a Reply