সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,শহীদ সন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন স্মরণ সভা গত ২৪ তারিখ সোমবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ফাতেমা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান ভূইয়া, মোহাম্মদ শাহজাহান, মরহুমের জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন নিশাদ পারভীন। তাঁর প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন রিতা রাণী সরকার, মোফাজ্জল হায়দার মজুমদার,অধ্যক্ষ এমদাদুল হক পলাশ,রতন ভৌমিক, মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম জুয়েল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, সাংবাদিক মোতাহের হোসেন মাহবুব, রতন ভৌমিক প্রণয় বক্তব্য রাখেন।
হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান কাজী মুজিবুর রহমান, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক জনাব ওমর ফারুক, নওয়াব ফয়জুন্নেসা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ সিদ্দিকী , শিক্ষাবিদ ও লেখক শান্তি রঞ্জন ভৌমিক, প্রফেসর কবির চৌধুরী সাবেক অধ্যক্ষ লাকসাম নওয়াব ফয়জুননেসা কলেজ, কুমিল্লা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ইন্দু ভূষণ ভৌমিক, বেগম রোকেয়া পদক প্রাপ্ত সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর জোহরা আনিস তারঁ ছোট ছেলে ডা. শরীফুল আবেদীন কমল বক্তব্য রাখেন।
অতিথি ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আমির আলী চৌধুরী । প্রধান অতিথি কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন ভূইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রফেসর ড. আবু জাফর খান।
ড. জয়নাল আবেদীন স্যারের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মের স্মৃতিচারণ করে বক্তারা বলেন, তিনি প্রখর ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। অন্যায়ের সাথে কখনো আপস করেননি।প্রচন্ড মেধাবী ও ছাত্রপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষার পাশাপাশি জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তার অনন্য ভূমিকা ছিল।ওল্ড ভিক্টোরিয়ান ড. জয়নাল ছিলেন একজন ছাত্র নেতা , শিক্ষক নেতা।
বারবার সুযোগ এলেও কখনো শিক্ষকতা ছেড়ে, কুমিল্লা ছেড়ে যাবার ইচ্ছে পোষণ করেননি।বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার সুযোগ ও একাধিকবার এসেছিল যাননি। বিসিএস এ অন্য ক্যাডার পেলেও শিক্ষকতা ছেড়ে যাননি, কখনো অফিসার হতে চান নি। নির্লোভ মানুষ ছিলেন তিনি। অধ্যাপক হবার কারণে তাকে গ্রামের বাড়িতে খুজতে গিয়ে না পেয়ে উনার বাবাকে পাঞ্জাবিরা গুলি করে হত্যা করে সেদিন। উনার এক চাচাকে সহ। শহীদ ছিলেন সন্তান তিনি।
শিক্ষাবিদ ও লেখক শান্তি রঞ্জন ভৌমিক তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বন্ধু সহকর্মীর স্মৃতিচারণে। তিনি উনার স্ত্রী ছোট বোন হামিদা আবেদীনের কথা বলেন কিভাবে উনার জীবনের প্রতিটি সাফল্যে সুখেদুখে পাশে ছিলেন জীবনসংগী হিসেবে। দুজনের আত্মার শান্তি কামনা করেন তিনি। দুজনে একসাথে ভিক্টোরিয়া কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই।এম এ পরীক্ষা দিয়েই কলেজে যোগদান করেন। তিনি যা হতে পারতেন তা হননি, হতে চান নি। ভাইভা নিতে এসে ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে বলেন তিনি সরাসরি না করেন নি কিন্তু কুমিল্লা ছেড়ে যান নি।
স্যারের প্রিয় ছাত্র এবং দীর্ঘদিনের সহকর্মী প্রফেসর কবির চৌধুরীর স্মৃতিচারণে পুরো অডিটোরিয়াম আশ্রু সিক্ত হয়ে উঠে। তিনি বলেন ড. জয়নাল ছিলেন সিংহ পুরুষ, এরকম সিংহপুরুষ আর জন্মাবে কি না আমাদের জানা নেই । তারমতো সাহসী শিক্ষক খুব কমই দেখা যায়। ড. জয়নাল যেখানে আছে সেখানে ফাকি দেয়া ছিল অসম্ভব। প্রধান পরীক্ষকের উত্তর পত্র নিরীক্ষণ করতেন উনারা। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু করে ১২টা বাজলেও কাজ শেষ না করে আসার উপায় ছিলো না এতটাই সিরিয়াস ছিলেন স্যার কাজে র প্রতি ।
এমন হাজারো স্মৃতি আছে স্যারের সাথে। আমি স্যারের অনেক স্নেহ আদর পেয়েছি।
উপস্থাপক (অধ্যাপিকা মাসুদা বেগম উনার সহকর্মী ও ছোট শ্যালিকা) বলেন তিনি একজন সুসাহিত্যিক ছিলেন। সুবক্তা ছিলেন। অনর্গল বলতে পারতেন। কথায় গল্পে মানুষকে মুগ্ধ করে রাখার অনন্য গুণ ছিল তার। অসংখ্য কবিতা গল্প লিখেছেন ও কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন তিনি। মাছ ধরা, বন্দুক দিয়ে পাখি শিকার করতে ভীষণ পছন্দ করতেন।
সম্মানীয় অতিথি প্রফেসর আমির আলী চৌধুরী তাঁর ছাত্র সম্পর্কে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন আমি উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ থাকাকালীন ড. জয়নালের কাছ থেকে যত সহযোগিতা পেয়েছি আর কারো কাছে পাইনি।শুধু কলেজে নয় বাইরেও যে কোন কাজে তার সহযোগিতার তুলনা হয়না । আরও অনেক স্মৃতি আছে সে গুলো আমার কাছে স্মৃতি হয়েই থাক। তার স্ত্রী হামিদা (স্যারের প্রিয় ছাত্রী) প্রতিবছর এই মাসে আমার জন্য মেষ্টার আচার করে নিয়ে আসতো। গত তিন বছর আমি আর আচার পাইনা। বলেন জোহরা, হামিদা ও মাসুদা তিন বোন ও ড. জয়নাল সবাই আমার ছাত্র।
প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ রুহুল মো.আমিন ভূইয়া বলেন, ওমর ফারুক ছিলেন ড. জয়নাল আবেদীন স্যার। ওমর ফারুক সবচেয়ে বেশি রাগী ছিলেন আবার সবচেয়ে বেশি দয়ালুও ছিলেন স্যার সেরকম অসাধারণ গুণের অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ স্যারকে জান্নাতবাসী করুন। বিশেষ অতিথি বলেন সদা হাস্যজ্বল মানুষ এবং ভালো শিক্ষক , ভালো বাবা ছিলেন স্যার।
স্যারের পরিবারের পক্ষ থেকে ডাক্তার কমল সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং কেউ তার বাবার আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নেন। বাবার আদর্শের জায়গাগুলো তারা অনুসরণ করে ডাক্তারি পেশায় এখনো সরকারি চাকরিটুকুই করছে কোন প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করছেনা নানাবিধ আদর্শিক কারণে। স্যারের ছাত্র এমদাদুল হক পলাশ, রতন ভৌমিক একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন।
বেগম রোকেয়া পদক প্রাপ্ত প্রফেসর জোহরা আনিস (স্যারের দীর্ঘ দিনের সহকর্মী ও স্ত্রীর বড় বোন) বলেন উনার কর্মের স্মৃতি চারণ করে শেষ করা যাবে না।এই বছরে ৬ জন পরমাত্মীয় মারা যায় তাই আমি কিছুটা বিপর্যস্ত। কুমিল্লাকে ছেড়ে যান নি এত ভালবাসা ছিল এই কলেজের প্রতি কুমিল্লার প্রতি।
প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ নিশ্চুপ বসে বক্তব্য শুনেছে দেখে খুব খুশি হন তাদের ধন্যবাদ জানান।
প্রফেসর সেলিনা রহমান সাবেক বিভাগীয় প্রধান স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন স্যারের উদ্দেশ্যে। রিতা সরকার বলেন স্যার আমাদের বলেছিলেন কখনো বাংলায় পড়েছ বলে হীনমন্যতায় ভুগবে না। বাংলা মানেই বাংলাদেশ।
মোতাহের হোসেন মাহবুব বলেন আমার বই লেখার প্রেরণা যারা দিয়েছেন তাদের মধ্যে স্যার অন্যতম । স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন ও দোয়া করা হয়। আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন ১ম বর্ষের আব্দুল্লাহ আল মামুন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ , সুধীজন, সাংবাদিক এবং বাংলাবিভাগের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতি প্রফেসর ফাতেমা সুলতানা বলেন স্যারের মৃত্যুর সংবাদ শুনে সাথে সাথেই বিভাগের সকল শিক্ষক নিয়ে স্যারের বাসায় বাড়ি চলে যাই। স্যারের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। সবশেষে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা বেগম।
Leave a Reply