অনলাইন ডেস্ক:
রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম খেলায় সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। তাই আজকে কোস্টারিকার সঙ্গের ম্যাচটি ছিল নেইমারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম খেলায় প্রায় দশবারের মত আঘাত পায় নেইমার। তাই আজকের ম্যাচে নাও খেলতে পারেন নেইমার বলে গুঞ্জণ ছিল। অবশেষে খেলেছে নেইমার।
প্রথম ম্যাচে ভাগ্যটা সহায় ছিল না ব্রাজিল সুপারস্টারের। অসংখ্যবার আক্রমণ করেও গোল পাননি। তবে আজকে কোস্টারিকার বিপক্ষে তার দল ব্রাজিল পেয়েছে ২-০ গোলের রোমাঞ্চকর জয়। নেইমারের বাধভাঙা উল্লাসে মেতে উঠারই কথা। কিন্তু আনন্দনৃত্য নয়, ম্যাচ শেষে ব্রাজিলিয়ান তারকা কাঁদলেন অঝরে।
শুধু সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামের দর্শকেরা নন, নেইমারের সেই কান্নার স্বাক্ষী হলো পুরো ফুটবল দুনিয়া। প্রথমে নিজের জার্সি দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না লুকানোর চেষ্টা করলেন। এরপর মাটিতে পা গেড়ে দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদলেন। পরে সতীর্থরা ছুটে এসে সান্ত্বনা দিল তাকে!
খেলার শেষ বাঁশি বাজির অন্তিম মুহূর্তে একটি গোলও পেয়ে যান ব্রাজিল সুপারস্টার। অনেক কষ্টের গোল। এ কারণেই হয়তো ম্যাচ শেষে দুহাতে চোখ ঢেকে অঝোরে কাঁদলেন নেইমার। আর সেই কাঁদার সময়টাও ছিলো অনেকক্ষণ।
অতি আনন্দে মানুষ হাসতে পারে না, কাঁদে। আজ শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে নেইমারের কান্না প্রমাণ করল সেটাই। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভালো খেলেও জিততে পারেনি ব্রাজিল। ব্রাজিলিয়ানরা দলের সেই ১-১ ড্র হতাশার জন্য দায়ী করে নেইমারকে।
বিশেষ করে ব্রাজিলের গণমাধ্যম স্পষ্টই কাঠগড়ায় দাঁড় করায় নেইমারকে। তাদের অভিযোগ, সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে নেইমার দলের জন্য খেলেননি! খেলেছেন নিজের জন্য। তাই বারবার ফাউলের শিকার হয়েছেন। ব্রাজিলের গণমাধ্যমের দাবি, পাস না দিয়ে বল নিজের পায়ে রাখতে গিয়ে নেইমারই সুইসদের ফাউল করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন!
দেশবাসীর সমালোচনাটা তাই মাথা পেতেই নিয়েছিলেন নেইমার। আর মনে মনে হয়তো প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, কোস্টারিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচেই সব অভিযোগ মুছে ফেলবেন। দলের একজন হয়ে খেলে দলকে এনে দেবেন জয়। আজ কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই তাই নেইমার খেললেন দলের একজন হয়ে। চষে বেড়ালেন মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। যেখানেই বল, প্রায় সেখানেই নেইমার।
কিন্তু সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েও কাঙ্খিত গোলের দেখা পাচ্ছিলেন না। শুধু তিনি নন, গোল পাচ্ছিলেন না ব্রাজিল দলের কেউই। আক্রমণের পর আক্রমণের ঢেউ তুলেও গোলের দেখা পাচ্ছিল না ব্রাজিল। প্রতিপক্ষ কোস্টারিকা যেন মাঠেই নেমেছিল ‘গোল করবও না, গোল খাবও না’ মন্ত্র পড়ে! নিজেদের সেই পরিকল্পনায় বলতে গেলে সফলও কোস্টারিকা। ম্যাচের ৯০ মিনিট পর্যন্তও শক্তিশালী ব্রাজিলকে গোলবঞ্চিত রেখেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটেই ব্রাজিলকে কাঙ্খিত গোল এনে দেন ফিলিপে কুতিনহো।
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও বার্সেলোনার এই তারকাই ব্রাজিলের একমাত্র গোলটি করেছিলেন। আজ করলেন আরও গুরুত্বপূর্ণ এক গোল। তার এই গোলেই জয় নিশ্চিত করে দিয়েছিল ব্রাজিলের। শেষ বাঁশির আগে আগে জয়ের ব্যবধানটা ২-০ করেছেন নেইমার। অনেক ঘাম ঝরানোর পর অবশেষে সেই প্রত্যাশিত জয়টা যখন ধরা দিয়েছে, আনন্দ-খুশিতে নেইমার তাই কেঁদেই ফেলেন মাঠে।
আর সেই গোল দিয়েই এবারের বিশ্বকাপে নিজের গোলের খাতা খুললেন নেইমার। পাশাপাশি ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় পেছনে ফেলে দিলেন রোমারিওকে। ৫৬ গোল নিয়ে তিনি এখন ব্রাজিলের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। তার উপরে কেবল রোনাল্ডো (৬২টি) ও কিংবদন্তি পেলে (৭৭টি)।
Leave a Reply