আকিবুল ইসলাম হারেছ,চান্দিনা।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার সানানগর ঊষা জুট মিল ও নুরিতলা আশা জুট মিলের প্রায় ৪ হাজার ৭০০ শ্রমিকের তিন সপ্তাহের বকেয়া বিল পরিশোধের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তিন ঘণ্টা অবরোধ করা হয়েছে।রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ওই মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকেরা। তাঁরা এ সময় বকেয়া বিল চাওয়ায় শ্রমিকদের নির্যাতন এবং চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদ জানান।
প্রায় তিন ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখা পর পুলিশের তৎপরতায় অবরোধ তুলে নেয় আন্দোলনরত শ্রমিকরা। করোনা ভাইরাস সতর্কতায় মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও টানা তিন ঘন্টা অবরোধে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।যানজটে আটকা পড়ে রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান সহ যাত্রীবাহী অনেক যানবাহনও। পরে চান্দিনা থানা পুলিশ, দেবীদ্বার থানা পুলিশ ও ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিস্তার রোধে গত ২৬মার্চ থেকে চান্দিনা ও দেবীদ্বার উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন সানানগর এলাকার ঊষা জুট মিল ও নূরীতলা এলাকা আশা জুট মিলের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। সরকারি বন্ধের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার পর ৫ এপ্রিল খোলার কথা ছিল। পরবর্তীতে মিলের ওই ছুটি ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। রবিবার (৫ এপ্রিল) সকাল ৮টায় শ্রমিকরা মিলে এসে মিল বন্ধ দেখে তাদের বকেয়া বেতনের দাবীতে মহাসড়ক অবরোধ করে।
একাধিক শ্রমিক জানান- টানা ১০ দিন মিল বন্ধ থাকায় আমরা না খেয়ে আছি। অন্যান্য মিলে শ্রমিদের বেতন পরিশোধ করার পাশাপাশি সরকারি ৫ হাজার টাকাও প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু উষা ও আশা জুট মিলে আমাদের পাওনা বেতনও দিচ্ছে না।
মিলের সিবিএ সভাপতি সুজন মুন্সি জানান- মিলের অর্থনৈতিক সংকট থাকায় পাট কেনার জন্য গত দুই মাস পূর্বে মালিক ও শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে ৩ সপ্তাহের বেতন বকেয়া রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। হঠাৎ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় গত ২৫ মার্চ শ্রমিকদের এক সপ্তাহের বেতন প্রদান করে মিল বন্ধ ঘোষনা করা হয় এবং মিল খোলার পর তাদের বকেয়া ২ সপ্তাহের বিল প্রদান করা হবে। কিন্তু শ্রমিকরা একটি গুজব রটিয়েছে যে, সরকার শ্রমিকদের পাথাপিছু ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে সেটা মিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিচ্ছে না। এমন গুজবকে পুঁজি করে অযথা আন্দোলন শুরু করে। আমি মিলের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছি যত দ্রুত সম্ভব তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে।
এ ব্যাপারে ঊষা জুট মিলের সিনিয়র ব্যবস্থপনা পরিচালক ফরহাদ হোসেন এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমার এডমিনিস্টেশনে কথা বলবেন।
চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. আবুল ফয়সল জানান- সরকারি ৫ হাজার টাকার অনুদানের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এমন একটি গুজব ছড়িয়ে মিলের শ্রমিকদের সাথে স্থানীয় কিছু অতিউৎসাহী লোক এক হয়ে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রামন বিস্তারে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমরা মিল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাসে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন।
Leave a Reply