(আকিবুল ইসলাম হারেছ,চান্দিনা)
চান্দিনায় মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চান্দিনায় ৬ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চান্দিনায় করোনার ‘সেঞ্চুরি’ পূর্ণ হলো।
করোনা যতটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে, একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লকডাউন ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসার প্রবণতা। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপের ইঙ্গিত দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত ১২ এপ্রিল চান্দিনায় করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরুর পর গত ৪৮ দিনে চান্দিনায় মোট ৩০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।কিন্তু গত ১ সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৭২ জন করোনায় শনাক্ত হয়। সব মিলিয়ে এখন চান্দিনায় করোনা রোগীর সংখ্যা ১০২ জন।
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা.আহসানুল হক মিলু জাগো কুমিল্লা কে বলেন, ‘মানুষ যদি নিজের ভালো না বোঝে, তাহলে স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু করার থাকে না। ভাইরাসটা দ্রুতই ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বত্র।মানুষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ঘরে থাকার অভ্যাস করতে হবে। নয়তো এ বিপর্যয় ঠেকিয়ে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়’।
এদিকে জেলা সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মারা গেছেন। তিনি মহারং এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।এনিয়ে চান্দিনায় মৃত্যু বেড়ে ৬ জনে পৌছল।এছাড়া আইসোলেশনে আছেন ৪০ জনেরও বেশি।
এদিকে উপজেলার মাধাইয়া বাজার ও নাওতলা এলাকায় ১৪ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে।এদের একজন ইতোমধ্যেই মারা গেছেন (৪৭)।এছাড়া উপসর্গ নিয়ে মৃত অপর একজনের স্ত্রী করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া মহারং এলাকায় ১৬ জন ও হারং এলাকায় একজন বিজিবি সদস্যসহ ৭ জন সনাক্ত হয়েছে।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন টেকনিশিয়ান, একজন এমবিবিএস ডাক্তার ও তাঁর পরিবারের দুই সদস্যও করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।টেকনিশিয়ান হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে কাজ করতেন।অন্যজন মেডিকেল অফিসার। তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃক গঠিত নমুনা সংগ্রহের টিমে কাজ করতেন।
এছাড়া মহিচাইল ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের একজন ডাক্তার,রামচন্দ্রপুর স্কুলের দুই সহকারি শিক্ষকসহ কাদুটি স্কুলের একজন শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।এদিকে চান্দিনা বাজারস্থ জনতা ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংক শাখার দুইজন ও জোয়াগ ইউপি সচিব করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বাকি শুধু বাতাঘাসী ও শুহিলপুর ইউনিয়ন:
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে,উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার মধ্যে শুধুমাত্র বাতাঘাসী ও শুহিলপুর ইউনিয়ন এখনো করোনামুক্ত রয়েছে।এর বাইরে বাকি সবগুলো ইউনিয়নের পোায় ৩২ এলাকায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এ পর্যন্ত চান্দিনা উপজেলায় মোট ১০২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।এর মধ্যে মহারং,হারং,ধাঁনসিড়ি এলাকাকে করোনার প্রথম হটস্পট হিসেবে শনাক্ত করে চান্দিনা উপজেলা প্রশাসন।
আক্রান্ত এলাকাগুলোর মধ্যে করোনার হটস্পট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে মহারং এলাকাকে। এ পর্যন্ত ঐ এলাকায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সর্বোচ্চ ১৬ জন ব্যক্তি। আর কোনো এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এর কাছাকাছিও নেই।
প্রতিদিনেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা:
চান্দিনায় প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। গত সাতদিনে ৩০টি স্থানে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে আরও ১৪ জনের।
চান্দিনা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ এপ্রিল চান্দিনায় করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়।চান্দিনায় প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ১৪ এপ্রিল।উপজেলার এতবারপুরে ১৯ বছর বয়সী দত্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের টেকনিশিয়ান এক যুবতী মেয়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হন বলে ধারণা করা হয়। পরে দ্বিতীয় করোনা রোগী শনাক্ত হন ওই ফার্মেসীর আরেকজন ছেলে।
গত ২৪ মে চান্দিনায় করোনা আক্রান্ত হন সর্বোচ্চ ২২ জন। একদিন বিরতি দিয়ে ২৬ মে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে আরও ১৪ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এরপর ২৭ মে চান্দিনায় করোনা রোগী শনাক্ত হন ৪ জন।২৮ মে চান্দিনায় সে সংখ্যা বেড়ে ১৭ জনে দাঁড়ায়।আক্রান্তদের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ওই দিন মারা যায়।এছাড়া বিসমিল্লাহ হোটেল মালিক ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
সর্বশেষ সাত দিনে শনাক্ত ৭২ জন:
চান্দিনায় করোনা পরিস্থিতির অবনতিটা কেমন হয়েছে তা শেষ সাত দিনের পরিস্তিতির দিকে তাকালেই বোঝা যায়।২৪ মে ৫৯টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ২২ জন।২৫ মে ১জন,২৬ মে ১৪ জন,২৭ মে ৪ জন,২৮ মে ১৭ জন,২৯ মে ৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
সর্বশেষ শনিবার (৩০ মে) চান্দিনায় আরো ৬ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে চান্দিনায় গত সাত দিনেই ৭২ করোনা রোগী শনাক্ত হলো। যা গত ৪০ দিনে শনাক্ত রোগীর ২৬ শতাংশ।
Leave a Reply