অনলাইন ডেস্ক:
দোষী সাব্যস্ত হলে নারী অফিস কর্মীর সঙ্গে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে সদ্য ওএসডি হওয়া জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবির চাকরিচ্যুতি হতে পারেন।
আজ সোমবার (২৬ আগস্ট) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম একথা বলেন।
তিনি বলেন, চাকরির বিধান অনুযায়ী তার চাকরিচ্যুতির মতো শাস্তিও হতে পারে। এছাড়াও তাকে ডিমোশন দিয়ে নিচের পদে নামিয়ে দেওয়া হতে পারে।সচিব বলেন, কেবিনেট ডিভিশনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি করে দিয়েছি। ভিডিওর বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তদন্ত কমিটির সঙ্গে এক্সপার্টদের রাখা হচ্ছে। কমিটি তদন্তের পর প্রতিবেদন দিলে সেই অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কি শাস্তি গ্রহণ করা হবে তা নির্ভর করছে তার বিষয় যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর, বলেন তিনি।তদন্ত কমিটি অবজেক্টিভলি দেখবে, ভিডিও কাণ্ডের বাহিরে যদি আরও কোন অপরাধ তিনি করে থাকেন সে বিষয়ে তদন্ত হবে বলেও জানান সচিব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা একটি বহুগামী নারী। যার বিরুদ্ধে অনেক অনৈ তিক কাজের অভিযোগ আছে এলাকায়। নির্বাচনের সুবাদে আমার সাথে পরি চয় হয়েছিল তার। এরপর থেকে আমার কাছে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে অসামাজিক কাজের অভিযোগ আসতে থাকে। এমনকি এই সাধনা, ২০০৯ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেন এই সাধনা। প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর এক পুলিশ সদস্যের সাথে বিয়েতে বসেন। কয়েক মাস যেতেই তালাক হয়ে যায় তাদের। এরপর এলাকার এক যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে বিয়ে করেন আবারো। এই স্বামীর সাথেও হয়ে যায় ছাড়াছাড়ি।
তিনি আরও বলেন, আজ (২৬ আগস্ট) তিনি অফিসে হাজিরা দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে এই এলাকায় বসবাস করছেন। এলাকার মানুষ তার এই অপকর্মের জন্য অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এরপর তো জেলা প্রশাসকের সাথে এই ঘটনায় সারাদেশ তোলপাড়। তার সম্পর্কে বলতে গেলে আমার সময় নষ্ট হবে শুধু।
নাম প্রকাশে না শর্তে এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, এই মহিলাকে (সাধনা) আমরা অনেক ধরেই দেখছি। উল্টা-পাল্টা চলাফেরা করে সে। বিভিন্ন সময় এলাকার বখাটে ছেলেদের সাথে মিশে। বাবা-মায়ের সাথে এই এলাকায় থাকে। আমরা শুনেছি সে নাকি পালিত মেয়ে। তাহলে তার বাবা মায়ের আসল পরিচয় কি? এই ধরনের মেয়েদের শাস্তি হওয়া উচিত।
এর আগে, মাদারগঞ্জ উপজেলার ৪নং বালিজুড়ী চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক ভোগলা বিডি২৪লাইভকে বলেন, গত দুই দিন ধরে আমার কাছে বিভিন্ন মহল থেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে সাধনা সম্পর্কে। আমার ইউনিয়নের ভোটার তিনি নন। আমি যতটুকু জানি, ১৯৯০ সালের বন্যার সময় খাইরুল ইসলাম নামের এক লোক এই মেয়েকে নিয়ে শুকনগরী গ্রামে আসেন এবং বেশ কয়েক বছর বসবাস করেন। খাইরুলের সংসারে কোন সন্তান জন্ম না নেয়ায় এই মেয়েকে কারো কাছ থেকে দত্তক নেয়। মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল। স্বামী মারা গেছে। একটি সন্তানও আছে তার।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমি লোক মাধ্যম শুনেছি স্বামী মারা যাওয়ার পরে এক যুবকের সাথে প্রেম সম্পর্কে জড়ান এবং এই ঘটনা জানাজানির পর তরা স্ব-পরিবারে জেলা শহরে চলে যান। সেখানেই বর্তমানে বসবাস করছেন।
মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিডি২৪লাইভকে বলেন, এই ঘটনার পর থেকে ফেসবুক বা বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে আমি পড়েছি বিষয়টি। আমিও জেনেছি সাধনা নামের মেয়েটি তার বাবার পালিত মেয়ে। তারা এখন জামালপুর শহরে বসবাস করছেন। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে কোন আদেশ নির্দেশ আসেনি। সে ক্ষেত্রে এর বেশি কিছু জানা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শুকনগরী গ্রামে এক বাসিন্দা বলেন, ৭ বছর আগে সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার স্বামী মা’রা যান। তাদের একমাত্র সন্তান ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। সে এখন তার খালার বাড়িতে আছেন। এই মহিলা ভালো না। অনেক ছেলে মানুষের সাথে সম্পর্ক করে। এই কারণে আমাদের গ্রাম থেকে চলে গেছে অনেক আগেই। এখন শহরে তো আর কেউ কিছু বলতে পারবে না।
সাধনা ২০১৮ সালে উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্ধ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক আহমেদ কবিরের সাথে দেখা করেন। তার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিনামূল্যে স্টল বরাদ্দ দেন জেলা প্রশাসক। উন্নয়ন মেলা চলাকালীন তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে যা শারীরিক সর্ম্পকে রূপ নেয়। এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তাদের। ইতোমধ্যে আহমেদ কবিরকে ওএসডিও করা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, ছায়া ডিসি সাধনার হাতে লাঞ্চিত হয়েছেন একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ডিসির প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্নি দপ্তরে বদলি, নিয়োগ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত কাজে সাধনাকে ম্যানেজ করতো সুবিধাভোগীরা। সবার মাঝেই ছায়া ডিসি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন এই প্রভাবশালী পিয়ন।
অফিস চলাকালীন সময়ে তাদের রঙ্গলীলা অবাধ করতে সেই কামরার দরজায় বসানো হয়েছিল লাল ও সবুজ বাতি। রঙ্গলীলা চলাকালে লালবাতি জ্বলে উঠতো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো বিশ্বস্ত পিয়ন। এই সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার জন্য প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময় তার অফিসের বাইরে ফাইলপত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকতো কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেকেই। লীলা শেষে পরিপাটি হয়ে যখন চেয়ারে বসতো তখন জ্বলে উঠতো সবুজ বাতি। সবুজ বাতি জ্বলে উঠার পরেই শুরু হতো দাপ্তরিক কার্যক্রম।
সাধনা অফিস সহায়ক পদে যোগদান করার পর জেলা প্রশাসকের অফিস রুমের পাশে খাস কামরাটিতে মিনি বেড রুমে রূপান্তর করতে খাট ও অন্যান্য আসবাবপত্রসহ সাজ্জসজ্জা করেন। সেই রুমেই চলতো তাদের রঙ্গলীলা।
Leave a Reply