অনলাইন ডেস্ক:
দেশের বর্তমান আলোচিত বিষয় হচ্ছে তরুণ চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যা। আর এই আত্মহত্যার ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। স্ত্রী মিতুর প্রতারণার প্রমাণ হিসেবে তার সঙ্গে প্রেমিকদের বেশ কিছু ছবি ও ম্যাসেজের স্ক্রিনশট ফেসবুকে আপলোড করেন আকাশ। এর ভিত্তিতে মিতুসহ ৬ জনের নামে মামলাও হয়েছে।
কিন্তু কে এই মিতু?
মিতু কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার আনিসুল হকের মেয়ে। মায়ের নাম সেলিনা শামীম। ছেলেমেয়েকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন মিতুর মা। বাবা থাকেন চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায়। ২০১৬ সালে ডা. তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর সঙ্গে বিয়ে হয় ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের। এর আগে তিন বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাদের। আত্মহত্যার আগে নিজের ফেসবুক আইডির টাইমলাইনে মিতুর লাগামহীন জীবন সম্পর্কে লিখেছেন ডা. আকাশ। এমনকি বিভিন্ন ছেলেদের সঙ্গে ডা. মিতুর একান্ত মুহূর্তের কিছু ছবিও পোস্ট করেন তিনি। স্ত্রীর প্রতি আকাশের আবেগঘন স্ট্যাটাস এখন কাঁদাচ্ছে তার পরিবার, স্বজন থেকে শুরু করে পরিচিত-অপরিচিত অসংখ্য মানুষকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ২০০৯-২০১০ সেশনের ছাত্রী তানজিলা চৌধুরী মিতু। ইন্টার্নশিপ করতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে পরিচয় হয় আকাশের সঙ্গে। তারপর গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক।
নিহত ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ছেলের পোশাক, ফ্রেমে বন্দি ছবি বুকে নিয়ে কাঁদছেন আকাশের মা জোবাইদা। সামনে যাকে পাচ্ছেন তাকে জড়িয়ে ধরে ছেলে হত্যার বিচার চাচ্ছেন। তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, দিনের পর দিন আমার ছেলেকে মানসিক অত্যাচর করে আসছিল মিতু। আমার ছেলে আত্মহত্যা করেনি, তাকে অত্যাচার করে হত্যা করা হয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। জোবাইদা বলেন, মিতুর মাও জড়িত, সে সবসময় মিতুকে খারাপ পরামর্শ দিতো। বিয়ের পর থেকে তাদের ঘরে অশান্তি। ওই মাইয়্যার (মিতু) অনেক ছেলের লগে সম্পর্ক ছিল। আমার আকাশ জেনেও বুকে কষ্ট নিয়ে ঘর করেছে।
চারপাশের দেয়ালে টাঙানো আছে চিকিৎসক দম্পতির কাঠের ফ্রেমে বন্দি একাধিক ছবি। তিনটি বেডরুমের প্রতিটিতেই আছে দামি আলমিরা, সোফা ও শোকেস। এসবে থরে থরে শোভা পাচ্ছে নানা রকমের শো-পিস।
আকাশের মা বলেন, এসব আমার ছেলের কেনা জিনিস। তিলে তিলে সংসার গড়েছে আমার ছেলে। এমবিবিএস পাশের সনদ এনে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে আকাশ বলেছিল ‘মা এ সনদ তোমার, তুমি এটির হকদার’ যেভাবে হোক না কেন এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করার ইচ্ছা ছিল তার। বাপরে ডিগ্রি তো আর তোমাকে নিতে দিল না। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন আকাশের মা জোবাইদা।
তিনি বলেন, বউয়ে এত কিছু করলেও ইজ্জতের ভয়ে আমার ছেলে সব সহ্য করে নিয়েছে। ভেবেছিল বউ একদিন ভালো হয়ে যাবে। এ কারণে কাউকে কিছু খুলে বলত না। বাবার রেখে যাওয়া অভাবের সংসারের হাল ধরেছিল সে। ছোট ভাইদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছে। সবই করেছে আকাশ। আমার ছেলের সাজানো সংসার তছনছ করে দিয়েছে বউ। আমি ন্যায়বিচার চাই।
চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার বলেন, ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো তিন থেকে চারজনকে আসামি করে নিহত চিকিৎসকের মা মামলা করেছেন। মামলায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় আসামি হিসেবে মোস্তফা মোরশেদের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু, শ্বশুর আনিসুল হক চৌধুরী, শাশুড়ী শামীম শেলী, শ্যালিকা সানজিলা হক চৌধুরী, স্ত্রীর বন্ধু মাহবুবুল হক ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ভারতীয় নাগরিক প্যাটেলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মিতু যেটা চেয়েছে সেটা আমার ছেলে এনে দিয়েছে। তার কিছুই অপূরণ রাখেনি। আমার সোনার মানিককে কেমনে ভুলে থাকব।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টা ২০ মিনিটে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিকের বি-ব্লকের ২ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাসা থেকে ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের লাশ উদ্ধার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে রাতে তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভুঁইয়া।
Leave a Reply