মাহফুজ বাবু কুমিল্লা :
রাস্তার পাগলিটাও মা হয়েছে তবে বাবা হয়নি কেউ। না এ ক্ষেত্রে ঘটেছে এক ভিন্ন ঘটনা যা মানবতার অনন্য এক নজির হয়েই থাকবে।
গত ২৬শে মে শনিবার বিকেল সারে ৩টায় কুমিল্লা জেলা সদরের আমতলী এলাকার মহাড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে সন্তান প্রসব করে এক মানুষিক প্রতিবন্ধী কিশোরী। নাক চেপে দাড়িয়ে জটলা করে দেখছিলো সবাই। দুর্গন্ধে পাগলিটার কাছে ঘেসছিলোনা কেউ। রাস্তার পাশে মাটিতে পরে ছিলো নাড়ি না কাটা সদ্যজাত শিশু রক্তাক্ত এক বদ্ধ উন্মাদ প্রতিবন্ধী কিশোরী । খবর পান নাজিরা বাজার ফাঁড়ি পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহমুদ।
নাম পরিচয়হীন ভবঘুরে কিশোরী এবং নবজাতক কন্যা শিশুটির প্রতি মানবিক দায়িত্ববোধ নিয়ে মানবিকতার এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর রুবেল । ঘটনাটি জানতে পেরেই সাথে সাথে ছুটে যান কুমিল্লা কোতোয়ালি থানাধীন নাজিরা বাজার ফাঁড়ির এই ইন্সপেক্টর। ফাঁড়ি পুলিশ সদস্য এবং স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করেন মানুষিক ভারসাম্যহীন ঐ কিশোরী ও নবজাতক শিশুটিকে। রাস্তায় বালুর মাঝে পরে থাকা শিশুটিকে পুলিশ ভ্যানে করে দ্রুত নিয়ে আসা হয় ক্যান্টনমেন্ট মার্কেট সংলগ্ন ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসা সেবা সহ যাবতীয় দায়িত্ব নেয় ইন্সপেক্টর রুবেল। এছাড়া সদর উপজেলার দৈয়ার এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা খোরশেদ আলম, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার খোরশেদ আলম কালু, ব্যবসায়ী স্বপন মিয়া তাৎখনিক কিছু আর্থিক সহায়াতা করেন বলেও জানান ইন্সপেক্টর রুবেল।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা হয় । ফুটফুটে শিশুটির নাম রাখা থেকে শুরু করে গত এক সপ্তাহ পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহমুদ হাছান রুবেল হাসপাতাল কতৃপক্ষের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন। ফুটফুটে শিশু ও মানুষিক প্রতিবন্ধী মায়ের খাবার দাবার ঔষধ সহ যাবতীয় দেখাশোনাও করেন তিনি। দুজনেই শারিরিক ভাবে সুস্থ রয়েছে বলে জানান ডাক্তাররা। তবে অমানুষিক ভারসাম্যহীন কিশোরীটি ভাবলেশহীন আর মানুষিক অবস্থার কোন পরিবর্তন নেই। কোন কথা নেই মুখে বাচ্চার প্রতিও নেই খেয়াল তার। বৃহস্পতিবার জান্নাতুল মাওয়া (জান্নাত) নামেই পিতৃ পরিচয়হীন নবজাতকের নাম রাখেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। ফুটফুটে শিশুটিকে দত্তক নিতে ইতিমধ্যে প্রবাসী সহ দেশের অনেকেই যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্সপেক্টর রুবেল জানান, “পুলিশের আসল কাজই হলো দেশ ও দেশের মানুষের সেবাকরা। এ পেশায় অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর যে সুযোগ রয়েছে তা আর কোন পেশায় আছে বলে মনে হয় না। কেবল মানবিক দায়িত্ববোধ নিয়েই অসহায় এই কিশোরী এবং ফুটফুটে শিশুটির জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। আমাদের মাননীয় পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হেসেন স্যার শিশু ও তার মায়ের খোজ খোবর নিয়েছেন আমার মাধ্যমে বেশ কয়েকবার ”
সরকারী গাড়ীতে এসি না থাকায় যানজট ও গরমে কষ্টের কথা চিন্তা করে নিজস্ব অর্থায়নে এসি এম্বুলেন্স ভাড়া করে দেন এই পুলিশ সদস্য। এরপর শনিবার দুপুর ১২টায় শিশু ও কিশোরী সহ সহায়তাকারী পুলিশ সদস্যদের ঢাকায় সরকারী আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠান তিনি।
আজ শনিবার কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক এর আদেশে মা ও শিশুটিকে জেলা সমাজকল্যাণ অফিসার নুরুল আমিন এর মাধ্যমে প্রেরণ করা হয় সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র (চাইল্ড হোম) ঢাকার মিরপুরে। কেউ দত্তক নিতে চাইলে সেখানেই যোগাযোগ করার জন্য জানান সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তারা।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন পত্রিকা, টিভি নিউজ এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিষয়টি ভাইরাল হওয়ায় ইনস্পেক্টর রুবেল ও বাংলাদেশ পুলিশের মানবিকতার এই খবরটি ছড়িয়ে পরে সকলের ফেসবুক ওয়ালে । কেবল মাত্র মানবিকতার টানে ইন্সপেক্টর রুবেলের এই ভূমিকার প্রশংসাও করেন সাধারণ জনগন। আর এর ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের অনন্য এক মানবিক দিক ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন । শত ব্যর্থতা, অর্জন আর আলোচনা সমালোচনার মাঝেও বাংলাদেশ পুলিশের এমন মানবিক রুপ দেশবাসীর মনে আশার সঞ্চার করে বলে ধারনা সুশীল সমাজের।
Leave a Reply