( অমিত মজুমদার, কুমিল্লা)
কুমিল্লায় একই দিনে দুই জন সাংবাদিক ছিনতাইকারীদের কবলে। যা রীতিমত কুমিল্লা সাংবাদিক মহল ও জনগণের মাঝে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের ভাবনা, যেখানে সাংবাদিকরাই নিরাপদ নয়, সেখানে সাধারণ মানুষদের কি অবস্থা হবে। সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এম পি র চান্দিনা নবাবপুর জনসভা শেষ করে ফেরার পথে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছে বিটিভির ক্যামেরা পার্সন ফয়সাল আহম্মেদ। এসময় তাকে মারধর ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
মঙ্গলবার রাত ৭ টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাধাইয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মুঠোফোনে বিটিভি ক্যামেরা পার্সন ফয়সাল আহম্মেদ জাগো কুমিল্লা ডট কমকে জানান, মন্ত্রীর জনসভা শেষ করে কুমিল্লা আসার জন্য গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। একটি মাইক্রোবাস (নোয়া) আমার সামনে থামানো হয়। পরবর্তীতে সেই মাইক্রোবাসে উঠে কুমিল্লার উদ্যোশে রওনা হই । ড্রাইভার সহ চারজন ছিল। মাধাইয়া এলাকায় মাইক্রোবাসে থাকা তিনজন আমার দুই হাত ধরে বিটিভির ক্যামেরা ছিনিয়ে নেই। তখন বলে আমাদের কাছে পিস্তল আছে কোন কথা বলবি গুলি করে দিব।
আমার পকেট থেকে ৪ হাজার টাকা তারা ছিনিয়ে নেয়। প্রচুর মারধর শুরু করে বলছে তোর কাছে ২০ লাখ টাকা আছে আমরা খবর পেয়েছি। জলদি দে। পরবর্তীতে বিটিভি ক্যামের পার্সনের পরিচয় দিলে, তারা স্তব্ধ হয়ে পড়ে । কিছুক্ষণ পর তারা বলছে আমাদের ক্যামেরা দরকার নেই টাকা গুলো নিয়ে তাকে মলম লাগিয়ে ফেলে দেই। পরবর্তীতে আমাকে মহাসড়কের ধামতী এলাকায় নামিয়ে দেয়। তাদের কাছের কোন প্রকার পিস্তল ও ছুরি ছিল কিনা এমন প্রশ্নে ফয়সাল বলেন, আমাকে এগুলোর ভয় দেখানো হয়েছি কিন্ত এগুলো দেখিনি। তবে তাদের কাছে এক প্রকার মলম ছিল। আমি ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে বিটিভির কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম রতন জাগো কুমিল্লা ডট কমকে জানান, বিষয়টি খুবই দু:খজনক। একই দিনে দুইজন সাংবাদিক ছিনতাইকারী কবলে। প্রশাসনের নিকট দাবি জানাচ্ছি দ্রুত ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ফয়সলের ক্যামেরা ভাংচুর করা হয়েছে এবং তাকে মারধরও করা হয়েছে।
অপর দিকে কুমিল্লায় সাংবাদিক মাহফুজ নান্টুকে ছুরিকাঘাত করে চলন্ত সিএনজি থেকে ফেলে দিয়েছে ছিনতাইকারীরা। এ সময় তার থেকে নগদ টাকা ও ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল পিস্তল দেখিয়ে নিয়ে যায়। তিনি আমাদের সময় ডট কম এর কুমিল্লা প্রতিনিধি ও দৈনিক আমাদের কুমিল্লা’র স্টাফ রিপোর্টার।
মঙ্গলবার বিকেলে পাল পাড়া ব্রীজের পরে মহেশপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কুমিল্লা সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। হাসপাতাল থেকে তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিক মাহফুজ নান্টু মুঠোফোনে জাগো কুমিল্লা ডট কম জানান, মায়ের পেনশনের টাকা নিয়ে পালপাড়া ব্রীজ থেকে সিএনজিতে উঠি। সিএনজির ড্রাইভারের সাথে একজন ও পেঁছনে একজন বসা ছিল। দুই তিন মিনিট পর সিএনজিটি মহেশপুর এলাকায় পোঁছলে চলন্ত অবস্থায় ড্রাইবারের সাথে বসে থাকা লোকটি পিঁছনে চলে আসে। একজন পিস্তল অন্যজন ছুরি বের করে।
আমার পেটে ছুরিকাঘাত করার সময় ছুরি ধরতে গিয়ে হাতে আঘাত প্রাপ্ত হই। এসময় আমার মায়ের পেনশনের টাকা ও দুইটি মোবাইল জোড়পূর্বক নিয়ে যায়।পরবর্তীতে চলন্ত সিএনজি থেকে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহায়তায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাত – কোমড় ও পায়ে আঘাত পেয়েছি । বর্তমানে মোটামুটি সুস্থ আছি। তবে তারা ছিনতাই কারী নাকি সন্ত্রাসী তা নিশ্চিত নয়, এ বিষয়ে থানায় অভিযোগের প্রস্ততি চলছে।
এই ঘটনায় সাংবাদিক সমিতি কুমিল্লা জেলার সভাপতি ইয়াসমীন রীমা ও সাধারণ সম্পাদক শাহাজাদা এমরান তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। একই সাথে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন যে, প্রশাসন দ্রুত সাংবাদিক নান্টুকে আহতকারী ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করবে।
Leave a Reply