আকিবুল ইসলাম হারেছঃ
শীতের রাত ১১টায় গ্রামীণ পরিবেশে ছিল সুনশান নিরবতা। তারই মাঝে হঠাৎ নবজাতকের চিৎকার। কিছুক্ষণ থেমে থেমে খাল পাড় থেকে ভেসে আসতে থাকে শিশুর কান্নার শব্দ। খালের কাছাকাছি বাড়ি ওসমানদের। সেখানে তখন চলছিল পিঠা তৈরীর কাজ। কান্নার শব্দ পেলেই থমকে যাচ্ছিল পিঠা তৈরি। সারারাত তারা ভয়ে আর খোঁজেননি কান্নার উৎস। অবশেষে ভোরের আলোয় খাল পাড়ে মিলেছে এক ফুটফুটে নবজাতক ছেলে। হদিস মেলেনি তার পিতামাতার। ঘটনাটি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা গ্রামের।
সূত্র জানায়, বুধবার সকালে চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা দক্ষিণ বাজারের ব্রীজ সংলগ্ন খাল থেকে উদ্ধার হয়েছে এক নবজাতক। খাল পাড়ের বাসিন্দা ওসমানের মা মনোয়ারা বেগম (৬০) প্রথম শিশুটিকে দেখতে পান। বর্তমানে শিশুটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বারের হেফাজতে রয়েছে।
মনোয়ারা বেগম বলেন,’ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম খাল পাড় থেকে শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। সারারাত প্রচন্ড ভয় পেয়েছি। পরদিন ভোরে আমি শিশুটিকে উদ্ধার করি।’
স্বজনরা জানান, পিঠা তৈরীর সময় রাতে শিশুর কান্নার শব্দ শুনে চরম ভয় পেয়েছিলেন ওসমানের পরিবার সদস্যরা। কান্নার শব্দ থামলেই তবে তারা কাজ করেছেন। আবার শব্দ শুনলে থেমে গেছে পিঠা তৈরী। এভাবেই রাত ১টা পর্যন্ত তারা রান্নাঘরে কাজ করেছেন ভয়ে ভয়ে। ঘুমাতে গিয়েও তারা মুক্তি পাননি শিশুর কান্না থেকে। রাত আনুমানিক দুইটার পর থেকে আর কান্না শোনা যায়নি।
বিব্রতকর রাতের পর বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম ভোরে ফজরের নামাজের পর ছুটে যান খাল পাড়ে। কিছুটা হাটার পর পরই দেখেন খালের একপাশে কাঁদা মাখা অবস্থায় পড়ে আছে ফুটফুটে নবজাতক। প্রথম মৃ ত ভাবলেও কাছে গিয়ে দেখেন বুক নড়ছে। পরে তিনি খাল থেকে নবজাতককে নিয়ে যান বাড়িতে।
খবর পেয়ে জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্নজন নবজাতক দেখতে ভীড় করেন বাড়িটিতে। তবে কেউ ধারণা দিতে পারেননি নবজাতকের পিতামাতার ব্যাপারে।
বাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার শাহিন আলম বলেন, ‘ঘটনা শুনে সকালেই ওসমানদের বাড়িতে যাই। বাচ্চাটির শারীরিক অবস্থা নাজুক দেখে দ্রুত নিয়ে যাই চান্দিনার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তারের পরামর্শশেষে শিশুকে নিজের বাড়ি নিয়ে রেখেছি। আমার স্ত্রী শিশুকে মায়ের মতো করে যত্ন নিচ্ছে।’
বাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে কেউ খাল পাড়ে ফেলে যায় নবজাতককে। শিশুটিকে উদ্ধার করে মেম্বারের বাড়িতে রাখা হয়েছে। এলাকায় কোন পরিবারে এমন ঘটনা ঘটেছে তা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
চান্দিনা থানার ওসি মো. আবুল ফয়সল বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
Leave a Reply