(আবু সুফিয়ান রাসেল, কুমিল্লা)
আপনি আপনার প্রয়োজন মত দোকান থেকে যে কোন একটি পণ্য ক্রয় করলেন। যা আমারা প্রতিনিয়ত করে থাকি। দোকানিকে আপনি দিলেন টাকা বিনিময় পেলেন মাল।দুই দিন পর, দুই মাস পর বা দুই বছর পর যদি ঐ দোকানি পালিয়ে যায় বা দোকান বন্ধ করে দেয়, আপনার কি কোন ক্ষতি হবে ? আপনি তো টাকার বিনিময় আপনার পণ্য বুঝে পেয়েছেন।
এমন সুন্দর যুক্তি, রেডিমেট কথার ঝুঁড়ি, টাকা, গাড়ি, বাড়ি আর দেশ-বিদেশ ভ্রমণের মিথ্যা লালসায় পরে বেকার তরুণ-তরুণি আর স্বাপ্নিকরা হাঁটছে প্রোডাক্ট ভিত্তিক এমএলএম এর পথে। তাদের মগজ দোলাই করা হয়, আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখিয়ে, আর গুছিয়ে কিছু মিথ্যা কথা বলে।অতিরিক্ত অর্থ আর অল্প দিনে বড় লোক হওয়ার আশায় নেটওয়ার্ক মাকেটিং এর ফাঁদে পা বাড়াচ্ছে সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের সে আবেগকে পুজিঁ করে দেশে-বিদেশে টাকার পাহাড় বানাচ্ছে তথাকথিত এমএলএম লিডাররা।
কুমিল্লায় নামে বেনামে বহু এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং) কোম্পানি সরকারি নিষেধ উপেক্ষা করে গোপনে চালু করেছে প্রোডাক্ট এমএলএম । কিন্তু এ ধরনের কোম্পানির নেই সরকারি কোন অনুমোধন। কিছু কিছু কোম্পানি চালাকি করে, দোকানের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে শুরু করেছেন এমএলএম ব্যবসা। আর সাধারণ কমিশন ভুক্তদের বলছেন এটাই সরকারি অনুমোধন।কুমিল্লায় গত ৩ বছরে এ ধরনের কথিত ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির জন্ম হয়েছে ৮/১০ টি। তার মধ্যে বাইট ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লি., মাই ড্রিম ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লি.,চয়েজ বাজার ডট কম, আমারদেশ ই সপ, গ্রীণ চয়েজ বিডি । এই ৫টি কোম্পানির বিজনেস প্ল্যান একই।অনুসন্ধানে দেখা যায়, যখন এমএলএম কোম্পানির লিডারদের মধ্যে টাকার ভাগ নিয়ে সমস্যা হয়, তখন সে লিডার তার টিম নিয়ে তৈরি করে দেন নতুন কোম্পানি। উপরে উক্ত ৫টি কোম্পানির সদস্য হতে হলে তাদের যে কোন একটি পণ্য ক্রয় করলেই সদস্য হয়ে যাবে। পরে অন্য কাজ হলো কারো নিকট পণ্য বিক্রি করা। দ্বিতীয় ব্যাক্তির নিকট পণ্য বিক্রি করার ফলে সে পাবে ১৪০টাকা।
যখন দ্বিতীয় ব্যাক্তি তৃতীয় ব্যাক্তির নিকট যে কোন পণ্য বিক্রি করবে , তখন দ্বিতীয় ব্যাক্তি পাবে ১৪০ টাকা আর প্রথম ব্যাক্তি পাবে ৬০ টাকা। প্রথম ব্যাক্তি ধারাবাহিক ভাবে এরূপ ১৩ জন থেকে কমিশন পাবে। কমিশনের ধারা হলো ১৪০,৬০,৩৫,৩০, ২৫, ১৫,১৪, ১৩,১২,১১,১০,৯,৮ টাকা । আর এ কোম্পানির ৮স্টার পর্যন্ত পদবি রয়েছে। ২স্টার হওয়ার জন্য ৫ জন, ৩স্টার হওয়ার জন্য ২৫ জন, ৪স্টার হওয়ার জন্য ১২৫জনকে সদস্য বানাতে হবে বা ১২৫টি পণ্য বিক্রি করতে হবে। ৫স্টার হওয়ার জন্য নিজ টিমের ৩জনকে ৪ স্টর বানাতে হবে,৬স্টার হওয়ার জন্য ৩জনকে ৫স্টর বানাতে হবে,৭স্টার হওয়ার জন্য ৩জনকে ৬ স্টর বানাতে হবে, ৮স্টার হওয়ার জন্য ৩জনকে ৭ স্টর বানাতে হবে।আর ৩ জন ৮স্টার বানাতে পারলে তিনি হয়ে যাবেন তাদের ডায়মন্ড। আর ডায়মান্ড পাবেন কোম্পানির একাংশের মালিকানা।আর সেই লোভেই এমএলএম চক্রের ফাঁদে পা দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাদের পণ্য সমূহ নিত্য প্রয়োজনীয় হলে ও এসকল পণ্যের মূল্য দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ পর্যন্ত দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায় বাজারে যে সকল পাঞ্জাবি ৫০০/৫৫০ টাকা বিক্রি হয়। গ্রীণ চয়েজ বিডির শো-রুম ও ওয়েব সাইটে এসকল পাঞ্জাবি ১১০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া আছে। আর মানুষ স্টার হওয়ার আশায় ক্রয় করছে এসকল পণ্য। মাই ড্রিমে ৬০০/৭০০ টাকার প্যান্ট বিক্রি করে ১২০০-১৫০০ টাকায়। ডাবলিও ২১ নামের একটি কোম্পানি ১৩৫০টাকা মূল্যের বার ফোন বিক্রি করে ৪২০০ টাকা। পয়েন্টের আশা আর রেঙ্ক পরিবর্তন, স্টার হওয়ার আশায় ধোকা খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেলস-বাই ডট কমের রয়েছে ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম জাতীয় কিছু স্লপ্টিমেন্ট ঔষধ।
যা মেডিসিন কোম্পানি ৩০০/৩৫০টাকা বিক্রি করে। এ সকল ঔষধ তারা ২২০০-২৮০০ টাকা বিক্রি করে। দ্বিগুণ বা তিনগুণ মূল্য কেন নেওয়া হয় ? এ প্রশ্নের উত্তওে মাই ড্রিম কোম্পানির এমডি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, মার্কেট থেকে আমরা সামান্য মূল্য বেশি নিতে হয় কারণ ডিসটিবিউটরদের কমিশন, কোম্পানির খরচ আছে। আর এখানে যারা ক্রয় করেন তারা আমাদের স্থায়ি ক্রেতা । তাদের একটা স্বপ্ন আছে। এটা কোন বিষয় না, আমাদের কাষ্টমাররা এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলে না।
অভিধানিক ভাবে ইংরেজি শব্দ বাইট অর্থ হলো কামড় দেওয়া, দংশন করা, ঠোকরানো, যন্ত্রণা দেওয়া। কোম্পানির নাম করণ সম্পর্কে বাইট ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লি. এর চেয়ারম্যান ওমর ফারুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর জানান, শুধু এমএলএম নয় সরকারের অনুমোধনহীন কোন কোম্পানি কুমিল্লায় ব্যাবসা করতে পারবে না। নিদৃষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে এ সকল কোম্পানির বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।
Leave a Reply