(আবু সুফিয়ান রাসেল, কুমিল্লা): একটি চায়ের দোকানের দেয়ালের স্টিকারে লেখা আছে, রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ। কিন্তু, কার নিষেধ, কে শোনে? সব বয়সীরাই নিজের দেখা রাজনীতির কথা বলছেন। কুমিল্লা শহরতলীর পুরাতন বিমান বন্দর এলাকার চিত্র এটি। শুধু এই এলাকাই নয়, প্রায় সব এলাকায় এমন চিত্রের দেখা মিলেছে।
একটি চায়ের দোকানের দেয়ালের স্টিকারে লেখা আছে, রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ। কিন্তু, কার নিষেধ, কে শোনে? সব বয়সীরাই নিজের দেখা রাজনীতির কথা বলছেন। কুমিল্লা শহরতলীর পুরাতন বিমান বন্দর এলাকার চিত্র এটি। শুধু এই এলাকাই নয়, প্রায় সব এলাকায় এমন চিত্রের দেখা মিলেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লার চায়ের দোকানগুলো যেন একেকটি মিনি পার্লামেন্ট! আদালত আর অফিস পাড়া নয়, শহর, শহরতলী আর গ্রামগঞ্জসহ সব এলাকায় বেড়েছে ভোটের উষ্ণতা। নির্বাচনের গরমে কিছুটা হার মানছে পৌষের শীত। ধূমায়িত চায়ের কাপে চুমুকে-চুমুকে চলছে ভোট বিশ্লেষণ। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে।
কুমিল্লা শহরতলীর পুরাতন বিমান বন্দর এলাকায় চায়ের কাপ হাতে মো. নুরু মিয়া বলেন, ‘দেশের উন্নতি হইছে, বহুত উন্নতি হইছে। ঢাকা গিয়ে দেখলাম সুন্দর রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার সব তো আওয়ামী লীগ করেছে। আগে যে চাকরিজীবীর বেতন ছিল ১৫ হাজার, তার বেতন হইছে ৩০ হাজার।’
নুরু মিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘কাক্কু তুমি তো সরকারি চাকরি করোনি? আমি সরকারি চাকরি করিনি? শতে পাঁচ জন মানুষ তো সরকারি চাকরি করে না, তাদের কথা বইলা লাভ কী?’
এই দুই জনের কথা শেষ না হতেই আারেকজন অভিযোগের সুরে বলেন, আওয়ামী লীগ জিতুক আর বিএনপি জিতুক, আমি সিএনজি ড্রাইভার। সিএনজির ড্রাইভারই থাইকাম, আর আপনি কামলাই থাকবেন। গাড়ি চালাই ১৭ বছর, যে দলই ক্ষমতায় আসুক সে দলের নেতারাই আমাদের থেকে চাঁদাবাজি করে। নেতারা যে ২৪ ঘণ্টা রাজনীতি করে, তাদের পরিবার চালায় কীভাবে, এই চাঁদার টাকা দিয়া।’ এভাবেই চলছে তর্ক-বিতর্ক। চায়ের দোকান নয়, এটা যেন এক মিনি পার্লামেন্ট!
রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ এমন স্টিকার কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে দোকানি খোকন উদ্দিন জাগো কুমিল্লাকে জানান, কিছুদিন আগে রাজনীতির আলাপে দুই পক্ষ মারামারি লেগে যায়, দোকানের জগ, বসার টেবিলসহ আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে। তাই এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ। স্টিকার লাগানের পর আলাপ বন্ধ হয়েছে কিনা? এ প্রশ্নে হাসি দিয়ে খোকন উদ্দিন বলেন, ‘বন্ধ হয়নি বরং আরও বেড়েছে। আগে চা বিক্রি হতো তিনশ কাপ, এখন বিক্রি হয় ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ কাপ।’
পিছিয়ে নেই গ্রামের চা দোকানগুলোও। কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ওড্ডা। এই গ্রামটিকে কুমিল্লা-চাঁদপুরের বর্ডার বললে হয়তো ভুল হবে না। কারণ এই গ্রামের পর ৫-৬ মাইল নিয়ে বিশকর্মা জলা। এরপর শুরু হয়েছে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা। বিশকর্মা জলার সড়কের টং দোকানেও রাজনীতির আলাপ বেশ সরগরম।
সেখানে সাইফুল ইসলাম নামের একজন জাগো কুমিল্লাকে বলেন, ‘বাজার ঠিক রাখতে পারবো যে, আমরা তাদেরকে ভোট দেবো।’
রফিক নামের এক কৃষক বলেন, ‘বিএনপির আমলে নুন কিনছি ১০ টাকা কেজি, এখন কিনি ৩৮ টাকা। আগে তেলের লিটার ছিল ৩৫-৪০ টাকা, এখন ১০০ টাকা। আমরার আয়তো সে হারে বাড়ে নাই। আগে দিন মজুরি করছি ১৮০-২০০ টাকা। এখন পাই ৪০০ টাকা। সব কিছুর দাম বাড়ছে।’
আদালত পাড়ার একটি টি-স্টলে পারস্পরিক কথা বলছিলেন দুজন আইনজীবী। একজন বলেন, যারা শহরে থাকে বা একটু উচ্চ পরিবারের, তারা ভোটকেন্দ্রে যায় না। সময় নষ্ট, গাড়ি ভাড়া, রোদে দাঁড়িয়ে থাকা এগুলোর কারণে। তবে তার কথায় একমত নন অন্য আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘ভোট দেওয়া আমার আধিকার। কষ্ট করে হলেও যিনি ভোট দেওয়ার, তিনি ঠিকই ভোট দেবেন।’
Leave a Reply