(আব্দুর রহমান, কুমিল্লা)
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে শুরু থেকেই মাঠে কাজ শুরু করে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। করোনা মোকাবিলায় কুমিল্লা জেলা ও ১৭টি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয় বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ও করোনার প্রভাব বিস্তার রোধে মাঠে নামে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
করোনা প্রতিরোধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ইতিমধ্যে কুমিল্লা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অন্তত ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে আক্রান্তদের বেশিরভাগই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। এরপর আবারও নেমে পড়ছেন করোনা যুদ্ধে।
কুমিল্লায় করোনা আক্রান্ত প্রশাসনের ওই ৪০ সদস্যের মধ্যে ৪ জন ম্যাজিস্ট্রেটও রয়েছেন। তারা হলেন— হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপ্তি চাকমা, কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো.আবু সাঈদ, তানজিমা আঞ্জুম সোহানিয়া ও সৈয়দ ফারহানা পৃথা। এই চারজন করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই মাঠে থেকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন অভিযানে অংশ নেন। ভূমিকা রাখেন লকডাউন বাস্তবায়ন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ, বাজার মনিটরিংসহ যে কোন অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কুমিল্লা জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। দেশের জেলাগুলোর মধ্যে কুমিল্লা জেলার প্রবাসীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যার কারণে মার্চের শুরু থেকেই বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে ব্যাপক তৎপরতা চালায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। সে সময় ১৭ হাজারেরও বেশি প্রবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কুমিল্লায় আসেন। জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের উদ্যোগে এসব প্রবাসীদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়। গত ৯ এপ্রিল কুমিল্লা প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে জেলায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৯৯ জন। এরই মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১০৩ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬১৩ জন।
সূত্রটি আরও জানায়, কুমিল্লায় করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে প্রশাসনের সদস্যরা। সম্মুখ থেকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে এরই মধ্যে ৪০ জন করোনা যোদ্ধা করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। আক্রান্ত ৪০ জনের মধ্যে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের ১৮ জন, বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসনের ১৫ জন ও বিভিন্ন উপজেলা ভূমি অফিসের ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়া রয়েছেন চারজন ম্যাসিস্ট্রেট।
কুমিল্লায় গত ৯ এপ্রিল করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর মাঠে কাজ করতে গিয়ে মূলত মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই প্রশাসনের এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনায় আক্রান্ত হতে থাকেন।
করোনা থেকে সুস্থ হয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) মো.আবু সাঈদ জানান, কুমিল্লার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মো.আবুল ফজল মীরের নির্দেশনায় আমাদের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা মোকাবিলায় মাঠে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে আমাদের ৪০ জন সদস্য করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। তবে আমিসহ আক্রান্তদের বেশিরভাগই এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
মো.আবু সাঈদ আরো জানান, করোনা জয়ী প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সুস্থ হয়ে আবারও কাজে ফিরছেন। জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের আক্রান্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রেখেছেন, আমাদের সাহস জুগিয়েছেন। তার নেতৃত্বে আমাদের সকল সদস্যরা লকডাউন বাস্তবায়ন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ করোনা মোকাবিলায় যে কোনো কাজ নিরলসভাবে করে যাচ্ছে। করোনা যুদ্ধে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন সব সময় সোচ্চার বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply