অনলাইন ডেস্ক:
ফেনসিডিলসহ বিভিন্নরকম মাদক চাওয়া মাত্রই মিলে কুমিল্লার সীমান্ত এলাকায়। সীমান্ত এলাকায় দিনের বেলায় মাদক বেচাবিক্রির দৃশ্য চোখে পড়লেও সন্ধ্যার পর থেকে পাল্টে যায় চিত্র। রাত যত বাড়ে সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসতে থাকে মাদকের বহর।
সীমান্তের কুমিল্লা অংশে বিজিবি-বিএসএফ’র লাইনম্যান নামধারীদের সহায়তায় ঘটছে বিভিন্ন রকম মাদকদ্রব্যের এপার-ওপার বাণিজ্য। সীমান্তে এপার-ওপার মাদক চালানের অন্যতম সহায়ক হিসেবেও লাইনম্যানদের পরিচিতি রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তাদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। সীমান্তের যেসব অংশে কাঁটাতারের বেড়া নেই এসব জায়গা দিয়েই মাদক ঢুকছে কুমিল্লা অংশে। চাহিদা অনুযায়ী কুমিল্লার জন্য রেখে বাকি মাদক পাচার হয়ে থাকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নপ্রান্তে। রোজার মাসে লাইনম্যানদের সহায়তায় রাতের বেলা সীমান্তের অরক্ষিত অংশ দিয়ে মাদকের চালান অনাসায়ে কুমিল্লায় আসছে।
কুমিল্লার বিভিন্ন বর্ডারপোস্ট প্রায়ই মাদকের ছোটবড় চালান আটক করছে। কিন্তু কমছে না মাদক বাণিজ্য। কুমিল্লা সদরের বিবির বাজার বিজিবি ক্যাম্প থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত শাহপুর সীমান্ত। আর ওপারে ভারতের শ্রীমন্তপুর সীমান্ত। এই অংশে নেই কাঁটাতরের বেড়া। তাই অবাধে ভারতের শ্রীমন্তপুর থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের কুমিল্লার শাহপুর দিয়ে কটকবাজার সীমান্ত পথে প্রতিদিনই মাদকের ছোট-বড় চালান আসছে। দুই দেশের সীমান্তের কাঁটাতারবিহীন ওই অংশ দিয়ে অনেকটা অবাধেই দুইদেশের লোকজন যাতায়াতের সুযোগ নিচ্ছে। আর এসব লোকজনের বেশিরভাগই মাদক ও চোরাচালান ব্যবসার সাথে নিজেদের জড়িয়ে রেখেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারত থেকে মাদক আনার তদারকি মূলত লাইনম্যানরাই করে থাকে। কটকবাজার-শাহপুর সীমান্তে হারুন ও ইউনুস ছাড়াও অন্তত ৮ থেকে ১০ জন লাইনম্যান রয়েছে। তারা এলাকায় বিজিবির লাইনম্যান হিসেবে পরিচিত। আবার শাহপুর সংলগ্ন গোলাবাড়ি গ্রাম দিয়ে কটকবাজার বিজিবি চেকপোস্ট ডিঙিয়ে মাদক পৌঁছানোর কাজটি করে থাকে দালাল বাবুল নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়ি কটকবাজার গ্রামেই। এছাড়াও সদরের বৌয়ারা বাজার সীমান্ত দিয়েও মাদক আসে। ওই সীমান্ত এলাকায় সেলিম নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে মাদকের চালান এসে থাকে। কুমিল্লা অংশের অন্যান্য সীমান্তের মধ্যে তালতলা বাজার দিয়ে ফেনসিডিল ও মদের চালানের নেতৃত্ব দেয় মিজান মিয়া নামে এক লাইনম্যান। মধুরাপুর ও বড়জ্বালা সীমান্তে রয়েছে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য ইসমাইল ও সেলিম নামে দুই ব্যক্তির তৎপরতা। কনেশতলা, নিশ্চিন্তপুর, বড়তলা সীমান্তে রয়েছে আবুল কালাম, ইদ্রিস মেম্বার, বাহার মিয়া ও ফেন্সি সেলিমের দাপট।
অন্যদিকে বাংলাদেশের কুমিল্লা সীমান্তের ওইসব অংশে নিয়োজিত উল্লেখিত মাদক ব্যবসায়ী, লাইনম্যানদের এখানে মাদকদ্রব্য আসার ব্যাপারে ভারতের কিছু মাদক ব্যবসায়ী সরাসরি সহযোগিতা দিয়ে থাকে। তারা এখানকার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে এ ব্যবসায় জড়িত। এদের বেশিরভাগই ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের লাইনম্যান হিসেবে পরিচিত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারত থেকে এখানে মাদকের চালান পৌঁছে দেয়ার কাজে নিয়োজিতদের মধ্যে রয়েছে ভারতের ধনপুর সীমান্তের মোহন মিয়া, কুলুবাড়ির সেলিম, বক্সনগরের নাজমুল, সোনামুড়ার দূর্গাপুরের ভুট্টো, কেরানীনগরের সাখাওয়াত, করালিয়া মুড়া সীমান্তের আবদু ও লিটন নামে দুই সহোদর। এছাড়াও বাংলাদেশের কুমিল্লার অংশের অন্যান্য সীমান্ত এলাকা দিয়েও বিভিন্ন রকম মাদকদ্রব্য প্রতিদিনই আসছে।
ভারতের উল্লেখিত মাদক ব্যবসায়ী ও বিএসএফের লাইনম্যান নামধারীদের বৈধ ও অবৈধ উপায়ে কুমিল্লা অংশে যাতায়াতসহ এখানকার মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। সীমান্তের এপার-ওপারে মিলেমিশে যারা মাদক বাণিজ্য করে যাচ্ছে তারা কিন্তু পুরোপুরি ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিজিবি, বিএসএফের লাইনম্যানধারীরা বাংলাদেশের কুমিল্লা অংশে মাদকের ছোট বড় চালান অনাসায়ে আনার কাজটি করে যাচ্ছে। এরাও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এসব লোকগুলো মাদক ব্যবসা অনেক পুরনো। পথঘাট সবই চেনা। ওদেরকে আটক করা হয়না। কারণ মাদকের চালানে সহযোগিতা বা সবুজ সংকেত দেয়া অসাধুদের সাপ্তাহিক বা মাসিক নগদ অর্থ পাবার পথ সঙ্কুচিত হয়ে যাবে। সূত্র: ইনকিলাব
Leave a Reply