(অমিত মজুমদার,কুমিল্লা)
কুমিল্লার আলোচিত জুয়েল মোল্লা (৩৫) নামে এক যুবক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। সে বরুড়া পৌরসভার বেলভুজ এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। তার ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়ী ছিল।
রবিবার ভোর রাত ৪টায় কুমিল্লা থেকে বাড়ি যাবার পথে বরুড়ায় লাইজলায় রাস্তার পার্শ্বে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে তার ব্যবহৃত মাইক্রোবাস খাদে পড়ে যায়। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জুয়েল মোল্লা বরুড়ার একজন প্রবাসী ও নব্য শিল্পপতি হিসেবে পরিচিত। ফেসবুক এবং বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে তাকে একজন আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ী ও মাফিয়া হিসেবে প্রচার করছিল কেউ কেউ। স্থানীয়ভাবে নিজেকে একজন দানবীর সমাজসেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বড় বড় অনুদান দিয়ে এলাকায় ছিলেন আলোচনায় সমালোনায় । খুব অল্প বয়সে হঠাৎ টাকার মালিক ও ফোকাস হয়েছিলেন জুয়েল মোল্লা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লা বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজম উদ্দিন মাহমুদ জাগো কুমিল্লা ডট কমকে জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় জুয়েল মোল্লা নামে এক ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। সে মাদক ব্যবসায়ী কিংবা সমাজ সেবক কিনা তা জানা নেই। তবে তার বিরুদ্ধে বরুড়ায় থানায় কোন মামলা নেই।
গত কয়েক মাসে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে তথ্যটি ভাইরাল হয়েছিল। তা জাগো কুমিল্লা পাঠকদের জন্য সরাসরি তুলে ধরা হলো।
সমাজসেবার লেবাসে দেশে ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে মাদক ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছে আলহাজ্ব জুয়েল মোল্লা। মিষ্টি কথা অার দানের কারনে বরুড়া উপজেলায় দানবীর হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে জুয়েল মোল্লা ।
সম্প্রতি সৌদি প্রবাসীদের কাছ থেকে জুয়েল মোল্লা সকল চাঞ্চল্য তথ্য বের হয়ে এসেেছে । সম্প্রতি জুয়েল মোল্লার ফাঁদে পরে সৌদিতে কুমিল্লার ১১ জন যুবক মাদক বিক্রির অভিযোগে কারাগারে রয়েছে । সৌদি পুলিশ এই সকল যুবকের কাছে বিপুল পরিমান ইয়াবা পেয়েছে । এই সকল ইয়াবা বাংলাদেশ থেকে বিমান যোগে সৌদিতে সরবারহ করতো জুয়েল মোল্লা ।
বাংলাদেশে মাদক ব্যবসা এবং এর ব্যবহার এখন এক ‘ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে’ এবং ‘রক্ষণশীল অনুমান অনুযায়ী’ এখন দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ এবং এর অধিকাংশই ইয়াবাসেবী – বলছেন একজন বিশেষজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশে নয় সৌদি প্রবাসীদের কাছে জুয়েল মোল্লার মত অনেক সিন্ডিকেট এখন ইয়াবা পাচাঁর করছে । ২৮ বছর বয়সী জুয়েল মোল্লা প্রতি মাসে কোটি টাকা ইয়াবা বিক্রি করছে ।
সৌদি প্রবাসী বরুড়া তলাগ্রামের ইকরামুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি সৌদি আরবে চাকুরির পেতে বেশ কষ্ট করতে হচ্ছে প্রবাসীদের । যারা ফ্রি ভিসায় গেছে তাদের জন্য চাকুরি ম্যানেজ করা খুবই কষ্টকর । এসকল বেকার যুবকদের টার্গেট করে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়েছে জুয়েল মােল্লা সহ আরো কয়েকজন । এক তথ্য মতে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমানের ইয়াবা আসক্ত যুবক সৌদিতে কাজ করছে । তাদের কাছে জুয়েল মোল্লার এজেন্টরা ইয়াবা বিক্রি করে অাসছে বলে জানান ইকরামুল ইসলাম ।
এছাড়া বরুড়া বেশ কয়েকজন সৌদি প্রবাসী জানান, তাদের তথ্য মতে ইয়াবা বিক্রির দায়ে ১১ জনের জেল হয়েছে । তার মধ্যে বরুড়া উপজেলার আমড়াতলীর ১জন , তলাগ্রামের ১জন , ঝলমের ১ জন, আড্ডার ১জন, বাতায়ছরির ১জন, লাকসামের বাগমারার ১জন, কুমিল্লা সদর উপজলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গুনাইনন্দী গ্রামের ১জন, চৌদ্দগ্রামের ৩ জনের জেল হয়েছে ।
তারা সবাই জুয়েল মোল্লার এজেন্ট হিসেবে পরিচিত । সৌদিতে ইয়াবার দাম বাংলাদেশের চেয়ে ৩গুন বেশি । বর্তমানে ঢাকা আর্ন্তজাতিক বিমানের বন্দরের একজন উদ্ধতন কর্মকর্তা ও দুইজন পুলিশ জুয়েল মোল্লার ব্যবসায়ীক পার্টনার । তাদের সহযোগীতায় খুব সহজে এয়ারপোর্ট দিয়ে ইয়াবা পাচার হচ্ছে সৌদিতে ।
এরঅাগে সৌদি আরবের রিয়াদের ‘হোটেল র্যাডিসান ব্লু’ থেকে দেশটির গোয়েন্দা পুলিশ জুয়েল মোল্লা সাপ্লাইয়ার বাংলাদেশ বিমানের দুই ক্রুকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন- আল মামুন শিশির ওরফে ফেরদৌস (৩০) ও আরিফ পাঠান রহিত (৩০
এদিকে বাংলাদেশ দূতাবাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, দেশের গন্ডি পেরিয়ে সৌদি আরবের প্রবাসী যুবকদের বিপথগামী করছে ইয়াবা। সম্প্রতি ইয়াবা কেনাবেচায় জড়িয়ে পড়েছে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক প্রবাসী যুবক। গত ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী ইয়াবা ও মাদকদ্রব্য বিক্রির অভিযোগে শুধু দাম্মামে ৪৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
সুত্র আরো জানায় সৌদি আরবের ইয়াবা ডিলার বরুড়ার জুয়েল মোল্লার অন্যতম এজেন্ট মোতালেব ও সুমনের সহযোগী নাসির হোসেন মুলত দেশ থেকে ওমরাহ্ করতে যাওয়া এবং নতুন যাত্রীদের মাধ্যমে ইয়াবা চালান সৌদি আরবে আনত। জেদ্দা এবং দাম্মাম এলাকায় ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারি ইয়াবা বিক্রি করতো নাসির।
গত মাসে দাম্মামের নিজ বাসা থেকে সৌদি গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে। এসময় তার রুমে থেকে ১৮০০পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে সৌদি আরব পুলিশ এবং গ্রেপ্তার করে অঞ্জাত স্থানে নিয়ে যায় । এরপর থেকে নাসিরের বেশ কিছুদিন কোন খোজ পাওয়া যাচ্ছিলো না ।
ইয়াবা ব্যবসায় নাসিরের সাথে জড়িত কুমিল্লার আরো কয়েকজন প্রবাসী যারা তার সাথে থাকতো বেশিরভাগ সময় তারা নাসির আটক হওয়ার পরই গা ঢাকা দিয়েছে দাম্মাম এলাকা থেকে। পরিবারের লোকজন ও বেশ চিন্তিত হয়ে পরে তার সাথে যোগাযোগ না থাকায়। গত দুদিন আগে নাসিরের খুব কাছের একজন দাম্মাম থেকে নাসিরের ইয়াবা সহ আটক ও দুবছরের সাজা হয়েছে বলে কয়েকজন জানালে বিষয়টি সামনে আসে। খোজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরই খবরটি ছরিয়ে পরে সকল প্রবাসীদের মাঝে।
কুমিল্লার শীর্ষ ইয়াবা ও মাদকের ডিলার হিসেবে পরিচিত দেশে এবং যে কজন আন্তর্জাতিক নামকরা মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো বরুড়া উপজেলার নব্য দানবীর জুয়েল মোল্লা।
মাফিয়া জগতের বাদশা দাউদ ইব্রাহিমকে ফলো করা এই জুয়েল মোল্লা ২৮/২৯ বছরের যুবক এতো টাকার মালিক হয়েছেন মুলত গত ৪/৫বছরে। ইয়াবা রপ্তানি ও স্বর্ণের আমদানি মুল পেশা তবে পাশাপাশি রয়েছে আদম ব্যবসার সাইনবোর্ড। ভিসা ও আদম ব্যবসার অন্তরালে যার আসল ব্যবসাই হলো ইয়াবা ব্যবসা।
হাজারো প্রবাসী যুবকদের জীবন ধ্বংসকারী ও মধ্যপ্রাচ্যে ইয়াবার ব্যবসা করে নব্য শিল্পপতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া এই জুয়েল মোল্লা। অনুসন্ধান ও প্রবাসীদের দেয়া নানা তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে বেড়িয়ে এসেছে তার ভয়ংকর ইয়াবা ব্যবসার কাহিনী।
মহিলা যাত্রী দিয়ে ওমরা হজ্বের নামে ও নতুন নতুন যাত্রীদের দিয়ে মদিনা ও রিয়াদ দিয়ে ইয়াবার বড় বড় চালান সৌদিতে ঢুকে তারই মাধ্যমে। সম্প্রতি জুয়েল মোল্লার ফাঁদে পরে সৌদিতে কুমিল্লার ১১ জন যুবক মাদক বিক্রির অভিযোগে কারাগারে রয়েছে।
সৌদি পুলিশ এই সকল যুবকের কাছে বিপুল পরিমান ইয়াবা পেয়েছে। হাজারো প্রবাসী অভিযোগ করে বলছেন সৌদির ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণরাকী এই জুয়েল মোল্লার প্রভাব ও সৌদি পুলিশের সাথে সখ্যতার কারনে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না তাকে।
নিজে ট্রাভেল এজেন্সি হলো এই ইয়াবা চালানের ও পাচারের মুল মাধ্যম। রাজনৈতিক মতাদর্শ বিএনপি হলেও আওয়ামীলীগ এর অনেক বড় বড় নেতার সাথে বেশ ভালই সম্পর্ক তার। কারন নির্বাচনে ভালো ডোনেশন দেন তিনি। এলাকায় দান খয়রাত করে সুনাম অর্জনের চেষ্টাও করেছেন বেশ তবে এলাকায় কোন গ্রহন যোগ্যতাই নেই তার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানান, জুয়েল মোল্লা পুলিশের হাতে ক্রসফায়ার হওয়া বিশ্বরোড এলাকার কালা স্বপনের সহযোগী ছিল, এছাড়াও নায়ায়নগন্জ ৭ খুনের প্রধান আসামী নুর হোসেনের একান্ত সহযোগী ছিল। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কোন সাংবাদিক তার বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশ করলে নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। সম্প্রতি জুয়েল মোল্লার হাতে এক সাংবাদিক নির্যাতিত হওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পরে।
Leave a Reply