(রবিউল হোসেন,কুমিল্লা )
কুমিল্লায় কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে ৩১ মার্চ পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৭ উপজেলার মধ্যে ৪টির চূড়ান্ত ফলাফলে চেয়ারম্যান পদে দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন।
বাকি দুই উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্র ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকায় উপজেলা দুটিতে চেয়ারম্যান পদে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। তবে এখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে কেন্দ্র দখল ও অনিয়মের অভিযোগে তিতাস উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
জানা যায়, বুড়িচং উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) ও উপজেলা আ’লীগের সহ সভাপতি প্রার্থী আখলাক হায়দার বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৪৩৭ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. হাসেম খান পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৮৪৫ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান(পুরুষ) পদে বই প্রতীকে মো:গোলাম ফারুক ৩৯৭২৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি মো.মতিউর রহমান খাঁন রুমেল পেয়েছেন ৩২৯৩৫ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান(মহিলা) পদে কলস প্রতীকে মো: পান্না আক্তার ৪৮৩৭৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি ফুটবল প্রতীকে সালমা আক্তার পারভীন পেয়েছেন৩৯০৫৬ ভোট।
ব্রাহ্মণপাড়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবু তাহের বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন । তিনি পেয়েছেন ৪০ হাজার ৬৭৩ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী পেয়েছে ২৪ হাজার ৯২৮ ভোট।
মুরাদনগরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আহসানুল আলম কিশোর ১ লক্ষ ৩১ হাজার ১০২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব গোলাম কিবরিয়া সরকার (কাপ-পিরিচ) ১৫ হাজার ৩ ভোট পেয়েছেন।
হোমনায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেহেনা মজিদ বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছে ৩৭ হাজার ৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সহিদুল্লাহ পেয়েছেন ২ হাজার ৪৭।
চান্দিনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নানা অনিয়মের দায়ে ৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এছাড়া ৮০টি কেন্দ্রের ফলাফলে চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী নৌকা প্রতীকে ৩৩ হাজার ৫৪৬ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য মো. মজিবুর রহমান আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ২০ হাজার ২৬৫ ভোট। এদিকে স্থগিত ৪ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ৩৭৪। ফলে ১৩ হাজার ২ ৮১ ভোট বেশি পেলেও নৌকা প্রার্থীকে বেসরকারি ভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি। অপরদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামীলীগ ঘোষিত প্যানেলের প্রার্থী মো. জহিরুল ইসলাম মুন্সী চশমা প্রতীকে ৩৫ হাজার ৯০৯ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফয়সাল বারী মজুমদার মুকুল তালা প্রতীকে ১৬ হাজার ৯৩ ভোট পেয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ ঘোষিত প্যানেলের প্রার্থী সাফিয়া আক্তার পদ্মফুল প্রতীকে ৩৩ হাজার ৩৩৬ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জান্নাতুল ফেরদৌস ফুটবল প্রতীকে ১৮ হাজার ৭৬৮ ভোট পেয়েছেন।
মেঘনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করায় চেয়ারম্যান পদে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা হয়নি। তবে এখানেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রতন সিকদার ১৬ হাজার ৯৩৮ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র মোঃ আবদুস সালাম (দোয়াত কলম) ৪৯৪ ভোট পেয়েছেন। মো: স্বতন্ত্র প্রার্থী তাজুল ইসলাম (আনারস) ১৫ হাজার ১ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: রমিজ উদ্দিন (ঘোড়া) ৩ হাজার ৩১১ ভোট এবং মো: সোহাইল (ইসলামী ঐক্যজোট) ১৫৬ ভোট পেয়েছেন। মেঘনায় স্থগিত ২ টি ভোট কেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণ হবে।
এদিকে,কুমিল্লার তিতাস উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। রোববার বিকেল ৩টার দিকে নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কায়জার মোহাম্মদ ফারাবী।
জানা যায়, রোববার তিতাস উপজেলার ৪৬টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে ভোট কেন্দ্রে সহিংসতা ও ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করার অভিযোগে উপজেলার ভিটিকান্দি, সাহাপুর, বন্ধরামপুরসহ ৩টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এছাড়া রোববার ভোট চলাকালে জাল ভোট, কেন্দ্র দখল ও সহিংসতাসহ নানা অভিযোগে উপজেলার জিয়ারকান্দি, দুধঘাটা ও দাসকান্দি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী মো. শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদারসহ তার অনুসারী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, ব্যালটে সিল মারা, মারধর ও জালভোটসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে দুপুরে ভোট বাতিলের দাবি জানান দলের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী পারভেজ হোসেন সরকার।
কুমিল্লা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কায়জার মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে নানা অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে বিকেল ৩টার দিকে তিতাস উপজেলার সকল কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
Leave a Reply