অনলাইন ডেস্ক:
বইছে নির্বাচনী হাওয়া। চলছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম কেনাবেচার উৎসব। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। আর এ নিয়ে মানুষের আগ্রহেরও কমতি নেই।
যাই হোক, সত্যিকারেই রাজনীতিতে নাম লেখানোর উদ্দেশ্যেই হোক বা নিচক অন্য কারণে, বাংলাদেশের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে এবং সংসদ সদস্য বা এমপি নির্বাচিত হতে চাইলে জেনে রাখতে হবে সংসদ সদস্য হবার প্রাথমিক যোগ্যতাসমূহ।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চম ভাগের প্রথম পরিচ্ছেদে বলা হয়েছে কী কী যোগ্যতা থাকলে এমপি হওয়া যাবে, কোন কোন অযোগ্যতা সংসদ সদস্য হবার অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
১. প্রথমত বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, বয়স ২৫ পূর্ণ হতে হবে। তবে আদালত কাউকে অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করলে সে আশায় গুড়েবালি।
২. কেউ আদালতের দ্বারা দেউলিয়া ঘোষিত হলে সে দায় থেকে মুক্ত হতে হবে। অন্যথায় তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারবেন না।
৩. প্রার্থী যদি অন্য কোনও দেশের নাগরিকত্ব অর্জন বা গ্রহণ করেন বা অন্য কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করেন, তবেও তিনি অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
৪. ব্যক্তি যদি কোনও ফৌজদারি মামলায় দোষী হয়ে কমপক্ষে দুই বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন, তবে নির্বাচিত হতে হলে তাকে কমপক্ষে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ পাঁচ বছর পার হওয়ার আগে তিনি আর নির্বাচিত হতে পারবেন না।
৫. প্রার্থী যদি বাংলাদেশ যোগসাজষকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭২) আদেশের অধীন যে কোনও অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে থাকেন, তবেও তিনি অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
৬. তাছাড়া ব্যক্তি যদি প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন; যা আইন দ্বারা তাকে নির্বাচনের যোগ্য ঘোষণা না করে, তবেও তিনি নির্বাচনে লড়াই করতে পারবেন না।
এসব ছাড়াও বাংলাদেশে বিদ্যমান কোনও আইন দ্বারা যদি প্রার্থী অযোগ্য বিবেচিত হন, তবেও তিনি নির্বাচিত হতে পারবেন না।
তবে ব্যক্তি যদি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন, তবে তিনি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে পুনরায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে এবং উপরোক্ত কোনও শর্ত দ্বারা নিষিদ্ধ না হলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
ব্যক্তির প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকার ক্ষেত্রে তিনি যদি কেবল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী পদে আসীন থাকেন, তবে তিনি অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
আবার নির্বাচনের পরেও যদি কখনও তিনি অযোগ্য প্রমাণিত হন, তবে সে আসন শূন্য হবে কি না তা শুনানি ও নিষ্পত্তির মাধ্যমে মীমাংসা করা হবে এবং এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
সেই সাথে উপরোক্ত বিধানগুলোকে কার্যকর করতে নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করতে সংসদ যেমন মনে করবে, তেমন ক্ষমতা প্রদান করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন আর পেছানোর সুযোগ নেই। ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচন পেছানোর দাবির বিষয়টি পর্যালোচনা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবিগুলো পর্যালোচনা করেছে। কমিশন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, আগামী মাসে বেশ কিছু আইনি এবং সাংবিধানিক বিষয় আছে। তাই হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। কোথাও পুনর্নির্বাচন বা উপনির্বাচন বা তদন্ত করার প্রয়োজন হতে পারে। নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ, নব নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথের বিষয়ও আছে। এ ছাড়া বিশ্ব ইজতেমা জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ ও তৃতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। লক্ষাধিক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে নিয়োজিত থাকে।
ইসি সচিব বলেন, সবদিক বিবেচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ৩০ ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন পেছানো যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবসম্মত হবে না। নির্বাচন পেছানোর আর কোনো সুযোগ নেই। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বরই নির্বাচন হবে।
Leave a Reply