অনলাইন ডেস্ক:
ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক হামলায় ৪০ জন জওয়ান নিহত হওয়ার পর ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ অতিক্রম করে পাকিস্তানের সীমানার ভেতরে হামলা করেছে ভারত।মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাতের দিকে ১২টি মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান পাকিস্তান সীমান্তে জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের (জেইএম) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প লক্ষ্য করে এক হাজার কেজি বোমাবর্ষণ করে ভারতীয় বিমান বাহিনী।
ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে এই হামলায় পাকিস্তানের ভেতরে বহু মানুষ নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, তারা এসব হামলা ঠেকিয়ে দিয়েছে। জঙ্গি হামলার ওই ঘটনার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে চলছে উত্তেজনা।
পাকিস্তানে বালাকোর্টে গভীর রাতে আকস্মিক ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলার পরই মঙ্গলবার সন্ধ্যা ও রাতে কাশ্মীর সীমান্তে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি এবং দু’দেশের মধ্যে ভারী মর্টার সেল বিনিময় হয়। ওই সময় ভারতীয় মর্টারের গোলায় দুই শিশুসহ পাঁচ পাকিস্তানি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের কর্মকর্তারা। আহত হয়েছে আরও কয়েকজন।
আজ বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের আকাশ থেকে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। এক সামরিক মুখপাত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর দিয়েছে। এতে বিমানের ২ পাইলট নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। তবে দেশটির বিমান কর্তৃপক্ষ পাইলট নিহতের খবরে নিশ্চিত কিছু জানায়নি।
এদিকে মঙ্গলবার ভারতের হামলার পরই বৈঠকে বসেছিল পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। সেখান থেকে দিল্লিকে হুমকিও দিয়েছে ইসলামাবাদ। বলেছে নিজেদের সময় মতো ভারতকে ‘চমক’ দেবে।এরই মধ্যে ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির সঙ্গে বৈঠকের ডাক দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এই কমিটির হাতেই আছে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবহারের সর্বোচ্চ ক্ষমতা।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কুরেশি জানান, আজ বুধবার পাকিস্তান পার্লামেন্টে যৌথ অধিবেশন। এরপরই ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী।
কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতের বিমান হামলার কথা অস্বীকার করলেও পাকিস্তান বলছে, ভারত যা করেছে তার জবাব দেওয়া হবে। শুধু তাই নয় জাতিসংঘেও বিষয়টি জানাবে পাকিস্তান।
সাংবাদিকদের পাক সেনার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আমরা ভারতকে ‘চমকে’ দেব। তার কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে এই চমকে দেওয়ার ব্যাপারটা সামরিক এবং রাজনৈতিক- দুভাবেই হবে।পরমাণু অস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানের এই বৈঠককে ভয় দেখানোর কৌশল হিসেবেই দেখছে দিল্লির প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মহলের একটা বড় অংশ। ভারতের এক সাবেক আমরা এনডিটিভিকে বলেন, পাকিস্তানের কাছে আর কোনও উপায় না থাকাতেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
অন্যদিকে এর আগেই পাকিস্তানের পরমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন খোদ সাবেক রাষ্ট্রপতি পারভেজ মোশাররফ। তিনি বলেন, একটি পরমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করলে পাল্টা একই ধরনের ২০টি বোমার সাহায্যে পাকিস্তানকেই ধ্বংস করে দিতে পারে ভারত।
প্রসঙ্গত, জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় ৪০ সিআরপিএফ জওয়ান নিহতের পর থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলার হুমকি-পাল্টা হুমকির বাগ্যুদ্ধের মধ্যেই মঙ্গলবার ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ অতিক্রম করে পাকিস্তানের সীমানার ভেতরে হামলা করেছে ভারত। এ হামলায় পাকিস্তানের ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। কিন্তু পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা এ হামলা ঠেকিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকেই পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও চরম আকার ধারণ করে।
Leave a Reply