অনলাইন ডেস্ক:
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল।
শনিবার উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুর্যোগকালীন করণীয় বিষয়ে এক মহড়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
অন্যদিকে মিয়ানমারের তুমব্রুতে ১৪৪ ধারা জারি করে সীমান্তের কোনারপাড়া শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের সরে যেতে আবারও মাইকিং করেছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি)।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সীমান্তের কাঁটাতার ঘেঁষে বিজিপির টহল জোরদারের পাশাপাশি কয়েক দফা মাইকিং করা হয়। এ সময় তারা শূন্যরেখা থেকে রোহিঙ্গাদের সরে গিয়ে বাংলাদেশের কোনো স্থানে আশ্রয় নিতে বলেছে। মাইকিংয়ের পর থেকে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গত ২৫ আগস্টের পর তুমব্রু শূন্যরেখায় আট হাজারের অধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আশ্রয় নেওয়ার ফলে বর্তমানে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা সেখানে অবস্থান করছে। প্রায় সাড়ে আট মাস ধরে এসব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সেনা, বিজিপি ও দেশটির উগ্রপন্থি বৌদ্ধরা নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে বলে সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন নীরব থাকার পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আবারও তাদের তাড়ানোর জন্য তৎপর হয়েছে। সকালে শূন্যরেখা ছাড়তে তাদের মাইকিং করার ফলে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের মার্চে মিয়ানমার সেনাবাহিনী শূন্যরেখা ছাড়তে একইভাবে মাইকিং করেছিল। সে সময় রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। পরে উভয় দেশের কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমদ বলেন, মাইকিং করে বিজিপি সদস্যরা বলছে রোহিঙ্গারা যেখানে অবস্থান করছে ওই স্থানটি মিয়ানমারের। তাই ১৪৪ ধারা জারি করে শূন্যরেখায় অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য বলছে মিয়ানমার। তিনি বলেন, সীমান্তে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য বিজিবিকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সীমান্ত এলাকায় দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের পতাকা বৈঠকের পর থেকে শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গারা ভালো ছিল। রমজানের শুরুতেই মাইকিং করে তাদের শূন্যরেখা ছাড়তে বলায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুর্যোগকালীন করণীয় বিষয়ে এক মহড়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলেছেন, আগামী আগস্টের মধ্যে অবকাঠামোর কাজ শেষ করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কপবাজার থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। এ ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ।
সচিব বলেন, বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া ১ লাখ ৩২ হাজার রোহিঙ্গাকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাকে ইতিমধ্যে অন্যত্র সরানো হয়েছে। বাকিদের আগামী বর্ষার আগেই সরিয়ে নেওয়া হবে।
বালুখালী-২ ক্যাম্পে বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া এ মহড়া চলে প্রায় এক ঘণ্টা। মহড়ায় ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতা করেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও দমকল বাহিনীর একটি যৌথ দল।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল মাহফুজুর রহমান বলেছেন, রোহিঙ্গারা পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসতি গড়ে তুলেছে। ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ধসের মতো দুর্যোগ হলে কীভাবে তারা নিজেদের রক্ষা করবে এ বিষয়ে মহড়া আয়োজনের মাধ্যমে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করে মহড়ায় তাদের শেখানো হয়েছে দুর্যোগে তারা কীভাবে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করবে।
কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) সমন্বয়কারী ম্যানুয়েল মারকুয়েস প্যারেইরা বলেন, নয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা ঘণবসতিপূর্ণ স্থানে খাড়া বালুকাময় পাহাড়ে বাঁশ ও পলিথিনের তৈরি ঘরে বসবাস করছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় এখানে দুই লাখ রোহিঙ্গাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪ হাজার রোহিঙ্গাকে জরুরি ভিত্তিতে স্থানান্তরের প্রচেষ্টা চলছে। জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আইওএমসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ বসতি তৈরিতে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply