(আবু সুফিয়ান রাসেল, কুমিল্লা)
কুমিল্লায় মাদক বিরোধী অভিযানে ২২ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ৫ দিনে ৮ জন তালিকভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। মাদক পাচারের অন্যতম রুট ভারতীয় সামান্তবর্তী উপজেলার আদর্শ সদর , সদর দক্ষিণ, চৌদ্দগ্রাম , বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ায় পুলিশ – মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে পৃথক বন্দুক যুদ্ধে তারা নিহত হয়।
২২ মে মঙ্গলবার রাত একটায় আদর্শ সদরের বিবির বাজার এলাকায় শরীফ নামের (২৬) পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সে সদর দক্ষিণ উপজেলার মহেশপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ৫ টি মাদক মামলা রয়েছে।
পৃথক অভিযানে একই স্থানে পিয়ার আলী (২৮) বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সে আদর্শ সদর উপজেলার শুভপুর গ্রামের আলী মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১৩ টি মামলা ছিল।
২৩ শে মে বুধবার রাত সাড়ে ১২ টায় আদর্শ সদর উপজেলার চাঁনপুর ব্রীজ এলাকায় ইসহাক ওরোফে ইসা (৩৫) ) পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সে আদর্শ সদর উপজেলার আব্দুল জলিলে ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১১ টি মামলা রয়েছে।
২৪ মে বৃহস্পতিবার রাত একটায় চৌদ্দগ্রামের আমানগন্ডায় এলাকায় পুলিশের বন্দুক যুদ্ধে বাবুল, ওরোফে লম্বা বাবুল নিহত হয়। সে চৌদ্দগ্রামের বৈদ্দের খিল গ্রামের আমান মিয়ার ছেলে।তার বিরুদ্ধে ৫ টি মামলা ছিল।
একই সময় সদর দক্ষিণ উপজেলার গোয়ালমথন এলাকায় রাজিব (২৬) পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সে সদর দক্ষিণ চাঙ্গিনি গ্রামের মৃত শাহ আলম মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১৩ টি মামলা ছিল।
২৫ মে শুক্রবার রাত ১২ টায় বুড়িচং উপজেলার মহিষপাড়া এলাকায় কামাল হোসেন, ওরোফে ফেন্সি কামাল (৫১) পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। সে আদর্শ সদর উপজেলার রাজমঙ্গল গ্রামের হিরণ মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১২টিরও বেশি মামলা ছিল।
২৬ মে শনিবার রাত দেড়টায় ব্রাহ্মণপাড়ার বাগড়া এলাকায় বাবুল (৪০) পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সে ব্রাহ্মণপাড়া আশাবাড়ি গ্রামের আব্দুল মালেকে ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১৬ টি মামলা রয়েছে।
একই সময় আলমাস(৩৬) নামে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সে ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় দক্ষিণ তেতা ভূমি গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ৮ টি মামলা রয়েছে।
এছাড়া পুলিশের বিশেষ অভিযানে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় নারী সহ কয়েক শতাধিক মাদক সেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
( জাগো কুমিল্লা.কম)
কুমিল্লা জেলাকে মাদকমুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা পুলিশ। এরই মধ্যে মাঠে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। অভিযানের শুরুতেই গত সোমবার দিবাগত মধ্য রাতে কোতয়ালী থানা ও ডিবি পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে শরীফ ও পিয়ার আলী নামে তালিকাভূক্ত শীর্ষ ২ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।
একই রাতে জেলার দেবিদ্বার উপজেলার জাফরাবাদ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সাদ্দাম হোসেন (২৬) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। এদিকে জেলায় মাদক ব্যবসা প্রতিরোধসহ এ নিয়ে সামাজিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ৩ গ্রুপে ৬ষ্ঠ থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘ইসলামের দৃষ্টিতে মাদক ও জঙ্গিবাদ’ বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতাসহ নানা পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো: শাহ আবিদ হোসেন।
মঙ্গলবার বিকালে তিনি দৈনিক কুমিল্লা কন্ঠকে বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্র্মুলে পুলিশ বেশ সফলতা দেখিয়েছে, মাদক নির্মুলেও পুলিশ সফল হবে।’ এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী মাদকমুক্ত দেশ গড়তে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সমূহকে নানা নির্দেশনা দিয়েছেন। পুলিশ সুপার বলেন, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি মহোদয় দেশ থেকে মাদক নির্মুল করার পাশাপাশি মাদক প্রতিরোধে সামাজিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, রমযান মাসে কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের মাঝে মাদক প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ‘ইসলামের দৃষ্টিতে মাদক ও জঙ্গিবাদ’ বিষয়ক রচনা এবং ৩য় অন্ত:জেলা পুলিশ সুপার হামদ/না’ত ক্বিরাত আযান প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে ইসলামের দৃষ্টিতে মাদক সেবন কিংবা এর ব্যবসার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করতে আলোকপাত করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই ‘মাদক মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।’ কিন্তু পুলিশের একার পক্ষে মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এ জন্য সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে মাদক সেবন, বিক্রয় কিংবা সংরক্ষন এসব বিষয়ে সামাজিক বিপ্লব গড়ে তুলতে পারলে মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা কঠিন কিছু নয়। পুলিশ সুপার এ জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি পুলিশকে সহযোগিতার জন্য আহবান জানিয়েছেন।
অনলাইন ডেস্ক:
দীর্ঘ পাঁচ বছরের তথ্য চুলচেরা বিশ্লেষণ করে কুমিল্লায় ২১১ জন শীর্ষ মাদক কারবারির নাম চূড়ান্ত করা হলেও তাদের বেশিরভাগই গা-ঢাকা দিয়েছে। দেশজুড়ে মাদকবিরোধী কঠোর অভিযান শুরু হওয়ার আগমুহূর্তেই তারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরায় পাড়ি জমিয়েছে। সেখানে বসেই তারা দেশের মাদকবিরোধী অভিযানের সবশেষ খবরাখবর রাখছে।
জেলার সীমান্তবর্তী ৫ উপজেলা ও ১৭ থানার তালিকাভুক্ত এ ২১১ মাদক কারবারির ৮ জন পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও বাকিরা পলাতক। এদের সবার বিরুদ্ধে একাধিক মাদকের মামলা থাকলেও তারা সবাই জামিনে রয়েছে। অনেকে বলছে, অভিযানের গন্ধ আগেভাগে পেয়ে যাওয়ায় তারা দেশত্যাগের সুযোগ পেয়েছে।
স্থানীয়রা বলছে, কুমিল্লা হচ্ছে দেশের মাদক পাচারের অন্যতম রুট। মাদক পাচার নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে দীর্ঘ দিন ধরে। এরাই নোম্যান্স ল্যান্ডের পাশে ভারতে গড়ে তুলেছে ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদকের কারখানা। শত শত বিঘা জমিতে চাষ করা হচ্ছে গাঁজা। জেলার সহস্রাধিক ছোট-বড় মাদক ব্যবসায়ী এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন সময় কিছু মাদক কারবারি ধরা পড়লেও মূল হোতারা বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের অনেকেই আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বড় বড় পদ-পদবীধারী। মাদকের এ রথী-মহারথীরা একেকজন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। হাইপ্রোফাইলের এসব ক্রিমিনাল সম্পর্কে পুলিশ অবহিত থাকলেও প্রমাণের অভাবে এরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
একটি সূত্র বলছে, মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পদের তালিকা প্রস্তুত করছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে এ তালিকা পাঠানো হবে। এদিকে মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিরও উদ্যোগ দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। জেলা পুলিশ সুপারের উদ্যোগে কমিউনিটি পুলিশিংসহ নানা সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে মাদকবিরোধী প্রচার চালানো হচ্ছে।
মাদকবিরোধী অভিযান এবং মাদক কারবারিদের দেশ ত্যাগ নিয়ে কথা হয় পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাদকের সঙ্গে জড়িতরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যেন মাদক ব্যবসায়ীরা ওপারে যেতে না পারে সে লক্ষ্যে সীমান্ত রক্ষা বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পুলিশের কোনো সদস্য যদি মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা ওই ব্যবসায়ীদের অর্থ-সম্পদের খোঁজখবর নিচ্ছি। এ লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কুমিল্লাকে মাদকমুক্ত করতে পুলিশের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। মাদক ব্যবসা ও তা সেবন বিষয়ে সামাজিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেও জেলা পুলিশ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কথা হয় দেশের অন্যতম মাদকবিরোধী সংগঠন লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘের সভাপতি কাউসার আলম সোহেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা আরও ৭ বছর আগে থেকেই দেশব্যাপী মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছি। দেশের ৪৫টি জেলায় লাল সবুজের হাজার হাজার সৈনিক এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। সরকারের চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে কুমিল্লার অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে জেলা পুলিশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। কুমিল্লায় এ পর্যন্ত যারা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে তারা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এবং যারা আটক হচ্ছে তারাও এর সঙ্গে জড়িত। পুলিশের এ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
কুমিল্লায় যে ২১১ জন শীর্ষ মাদক কারবারির নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে তার মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম হাতে আসছে। এরা হচ্ছে- জেলার সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গঙ্গানগর এলাকার শীর্ষ মাদক সম্রাট আবুল হোসেন, শশীদল এলাকার হেলাল উদ্দিন, রিপন মিয়া, তেতাভূমী এলাকার আলী আকবর, দীঘিরপাড় এলাকার বাবুল মিয়া, বুড়িচং উপজেলার চরানল এলাকার শীর্ষ মাদক সম্রাট হুমায়ন মেম্বার, মহসিন, শংকুচাইল এলাকার রবিউল ইসলাম রবি, বিল্লাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, আবদুল খালেক ওরফে মুরগি শাহিন, পাইকোডা এলাকার জসিম উদ্দিন, কালাকচুয়া এলাকার মাদবচন্দ্র সাহা, উত্তরগ্রামের ফিরোজ মিয়া, এনামুল হক, মীরপুরের খোরশেদ আলম, জামাল খান, নগরপাড়ের এনু মিয়া, বারেশ্বর গ্রামের মানিক মিয়া ও নুরুল ইসলাম, সদর দক্ষিণ উপজেলার সোয়াগাজী এলাকার নুরুল হক, শ্রীবল্লভপুর এলাকার মনির হোসেন, একবালীয়া এলাকার আনা মিয়া, মোড়াপাড়া এলাকার হান্নান, আদর্শ সদর উপজেলার ধর্মপুর এলাকার জিন্নাতুন নেছা, শাসনগাছা এলাকার সুরাইয়া বেগম, বালুতোপা এলাকার শিবু, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী চান্দিশকড়া এলাকার আরিফুর রহমান, বসন্তপুর এলাকার রুবেল মিয়া, দেলু, উপজেলা সদরের নাছির উদ্দিন ও জগমোহন এলাকার শাহীন।
এদের ব্যাপারে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার খবর পেয়েই এদের আর দেখা যাচ্ছে না। এরা সবাই ওপারে চলে গেছে। সূত্র: যুগান্তর
Leave a Reply