ঈদ ত্যাগ তীতিক্ষা এবং সহমর্মিতা পরাকান্ঠা হলেও এই যে আদর্শ তা বাস্তবে পুরোপরি অনুসরণ করা হয় না। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। কি রোজার ঈদে, কি কোরবানীর ঈদে, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও ধনী শ্রেণীর মধ্যে একটা ফারাক থেকে যায়। রমজানের রোজা রাখার বিষয়টি ক্রমেই যেন মধ্যবিত্ত এবংনিম্নবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। ধনী শ্রেণীর মানুষ নানা অজুহাতে উপবাস থেকে বিরত থাকছে। কিন্তু ইফতারের আয়োজনে তারা মোটেও কার্পন্য করছে না।
আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবদেরই প্রধানত আমন্ত্রন জানানো হচ্ছে প্রাচুর্যে ভরা ইফতার অনুষ্ঠান কিন্তু ধনীদের কাছ থেকে গরীবরা সেই প্রাপ্য ইফতার পাচ্ছে না। অন্যদিকে কোরবানীর ঈদে ধনী শ্রেণীর মানুষ প্রতিযোগিতা করে কোরবানীর পশু ক্রয় করে। গরীবদেরকে গোশত কম দিয়ে ফ্রিজ ভর্তি করে রাখার রেওয়াজ ধনী শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বেশি, ধনী ব্যক্তিদের শুধু কোরবানী দেয়াই যথেষ্ট নয়। কোরবানী কবুল হওয়ার জন্য কিছু করনীয়, বর্জনীয় ও সতর্কতার ব্যপারে আমাদেরকে খুবই মনোযোগী হতে হবে। অন্যদিকে যাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রেও তারা মানছে না।
যখন কেউ জনপ্রিয়তার জন্যে কোনো শিল্পপতি, বিশিষ্ট্য ব্যবসায়িক, বিশিষ্ট্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা আলোকিত সমাজ-সেবক এবং এর মধ্যে কেউ কেউ আছে নিজের সুনামের জন্য ইউনিয়নের, গ্রাম, পাড়া সকল দরিদ্র নর-নারীকে যাকাত দেওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়ে থাকে এরই ধারাবাহীকতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু বলতে গেলে দেখা যায় কিছু কিছু বড় লোক আছে অনেকে তাদের সুনামের জন্য যাকাত প্রদান করে থাকেন এবং এই যাকাত দেওয়ার জন্য পুরো গ্রাম,মহল্লা দরিদ্র নর-নারীকে দাওয়াত দিয়ে থাকেন এতে করে অনেক দরিদ্র লোক যাকাত নিতে এসে ধাক্কা-ধাক্কির কবলে পরে কিছু না নিয়ে বাড়িতে চলে যেতে হয়।
এদিকে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে শহরের কর্মজীবি মানুষদের স্বপরিবার গ্রামে নারীর টানে গ্রামের বাড়িতে যাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে ঘন্টা পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে সংগ্রহ করা হচ্ছে ট্রেন এবং বাস লঞ্চের টিকিট। জানা গেছে বিগত বছর গুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে ঘরমুখি মানুষের ঈদ যাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে সরকার গুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে।
যানজট, বাড়তি ভাড়া আদায় ও চাদাবাজি ঈদ যাত্রার প্রধান এই তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মহাসড়কে যাত্রার বিড়ম্বনা কমাতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে। ঈদের ৪-৫ দিন আগ থেকে ২-৩ দিন পর পর্যন্ত মহাসড়কে ভারি যানবাহন চলাচলও বন্ধ রাখা হতে পারে। এরপরও ঈদ যাত্রীদের চলাচল সহজ করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু কথা হচ্ছে প্রতি বছরেই সরকার ঈদ ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নিরাপদ করতে নানা মুখি নিয়ে থাকলেও বাস্তবে এর সুফল পান না সাধারন মানুষ।
ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে। এবার তার ব্যতিক্রম হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছে ঈদে ঘরমুখো মানুষের চলাচল সাধারনত তেমন সুখের ও সহজ হয় না। রেলপথে থাকে টিকিটের বিড়ম্বনা ও নৌ পথে, সড়ক পথে থাকে সীমাহীন চরম দুর্ভোগ। দৈনিক খবরের অনুযায়ী দেখা গেছে টিকেট বাজারে বেড়ে গেছে কালো বাজারি চক্রের দৌরত্মা। এ
তে বাড়ছে ঘরমুখো মানুষের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। ঈদকে কেন্দ্র করে নানা অপরাধী চক্রের তৎপরতা বেড়ে গেছে। চোরা পথে দামি টিকেট কিনে নিরাপত্তা ভাবে বাড়িতে পৌছার নিশ্চয়তা নাই, সন্ত্রাসী, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, ছিনতাইকারী দৌরত্মাসহ নানা কারনে । আবার প্রতি বছরেই দেখা যায় ঈদ এলেই সিএনজি, বাস, অটো সহ সকল যানবাহনের ভাড়া অতিরিক্তহারে বাড়িয়ে দেয়।
তবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তৎপর থাকলে সাধারন মানুষ স্বস্তি বোধ করবেন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা তৎপর হলে জনদুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হবে এবং জনসাধারনের কিছুটা নির্বিঘœ ও বিড়ম্বনাহীন হবে। আসুন আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে পথ শিশু ও হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাড়িয়ে ঈদকে আরো আনন্দময় করে তুলি। সঠিক কর্তব্য পালন করে পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে ঈদের ঘরমুখো মানুষদের যাত্রা নিরাপদ, বিড়ম্বনাহীন ঈদ আনন্দময় শুভ হবে।
আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়
অর্থ সম্পাদক (বাংলাদেশ কবি সভা, কুমিল্লা জেলা শাখা)
Leave a Reply