(মোঃ ফখরুল ইসলাম সাগর,দেবিদ্বার)
কোরবানির ঈদে দেবিদ্বারে দেশীয় গরুর হাটগুলোতে স্থানীয় গরুর চাহিদা থাকে ব্যাপক। তুলনামূলক ভাবে ভারতীয় গরু এখানকার হাট-বাজারগুলোতে কমই ওঠে। তাই আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গরু, ছাগলে ওজন বৃদ্ধি ও চামরা সুন্দর করতে প্রানিসম্পদ অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী স্থানীয় খামারী ও প্রান্তিক কৃষকরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে (স্বাস্থ্য সম্মত) করেছেন গবাদী পশু মোটা তাজা করণ।
কোরবাণী ঈদের বাকী আর মাত্র ৯ দিন। এরই মধ্যে দেবিদ্বার উপজেলার খামারীরা তাদের গবাদি পশু হৃষ্ট পুষ্ট করা সহ বাজারে পশু সরবরাহের সকল কাজ সম্পন্ন করেছেন। সারা দেশের ন্যায় দেবিদ্বারে ও দেশী গরুর চাহিদা বেশী। ভারতীয় গরু এখানকার বাজারে খুব কমই উঠে। কোরবাণীর ঈদে বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের স্বল্প আয়ের মানুষ ৪-৫ মাস আগে থেকেই কম দামে গরু কিনে লালন পালন করে। ধণীরা ও গরু কিনে স্বল্প আয়ের পরিচিত দরীদ্র কৃষকদের নিকট বর্গা দেন। সেজন্য উপজেলায় শুধুমাত্র হৃষ্ট পুষ্ট করনের বড় কোন খামার না থাকলে ও অনেকেই ১-২ টা থেকে আরম্ভ করে ৪০ -৪৫ টা পর্যন্ত গরু এবারের কোরবানীর বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। তেমনি একজন খামারী গোমতী এগ্রো ফার্মের মালিক মো. আজহার উদ্দিন। তিনি উক্ত প্রতিবেদককে জানান, এবারের কোরবাণীতে বিক্রির জন্য তিনি দেশী ও সংকর জাত মিলিয়ে ৪৫ টি গরু প্রস্তুত করেছেন।
এদিকে দেবিদ্বার পৌর এলাকার মরিচাকান্দা গ্রামের ওমান প্রবাসী মোঃ বিল্লাল হোসেন এবছর একটি গরুর খামার করেছেন, এই খামারে কোরবানীর জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে ১৪টি দেশীও জাতের গরু মোটা তাজা করেছেন । ক্রয় থেকে এই পর্যন্ত গরু ও লালন পালন বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা, তবে তিনি আশাবাদী এবার বাজারে ভারতীয় গরু না আসলে আনুমানিক ১৭ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবেন।
ফতেহাবাদ ইউ. পি. চেয়ারম্যান খন্দকার এম এ ছালাম ১৯ টি, ছোট শালঘরের হাজী মো ইউনুস মিয়া ৩৭ টি গরু প্রস্তুত করেছেন বলে জানা গেছে। কি প্রক্রিয়ায় বা কৃত্রিম কোন উপায়ে এই সকল পশু হৃষ্ট-পৃষ্ট করেছেন কিনা জানতে চাইলে তারা জানান যে প্রানিসম্পদ অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী সম্পুর্ন বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে তারা গরু হৃষ্ট-পুষ্ট করেছেন। ভারতীয় কোন নিষিদ্ধ ঔষধ এর মাধম্যে বা কোন হরমোন প্রয়োগ করেছেন কি না জানতে চাইলে তারা বলেন তাদের এটা প্রয়োজন নেই। এটা সাধারনত যারা কোরবাণীর ৫-১০ দিন আগে গরু কিনে অধিক লাভে বিক্রি করতে চায় তারা এ কাজ করে থাকে।
উপজেলা প্রানিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় সরকারী নিবন্ধন কৃত গরুর খামার রয়েছে ১৮টি ও অনিবন্ধিত ৩২টি। এ বছর কোরবানীর জন্য উপজেলা গরু-ছাগলের চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৩শ’। তবে দেবিদ্বার উপজেলার ৩হাজার ৩শ’ ৫২ জন খামারী ১৭ হাজার ৫শ’ টি গরু-ছাগল কোরবাণীর বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এবার ও চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত দেশীও পশু মজুদ রয়েছে।
কোরবাণীর পশুর মাংশ নিরাপদ কি না জানতে চাইলে উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা, ডা. এ এফ এম রকিবুল হাসান ভ’ঞা জানান এ বছর এন.এ.টি.পি ফেজ -২ প্রকল্প ও রাজস্ব খাত মিলিয়ে মোট ১৪শ‘ খামারীকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু হৃষ্ট-পুষ্টকরন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং কৃত্রিম উপায়ে হৃষ্ট-পুষ্ট করনে পশু ও মানুষের স্বাস্থ্যগত ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। সুতরাং খামারীরা নিজের স্বার্থেই ঝুকিপূর্ণ কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় পশু হৃষ্ট পুষ্ট করে তাদের বিনিয়োগ ক্ষতি করবে না । কারন এতে পশু মৃত্যুর ঝুকি অনেক বেশি বেড়ে যায়।
তারপর ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে যদি জানা যায় যে কোথাও নিষিদ্ধ ঘোষিত ক্ষতিকর ঔষধ বিক্রি হচ্ছে তাহলে প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
Leave a Reply