অনলাইন ডেস্ক:
অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বাবুল সাজি। কখন আসবে মেয়ে শিউলি আক্তার পিংকি। অবশেষে দেখা মিলল তার। এসেই বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন শিউলি।
মেয়েকে বুকে আগলে নিজের কান্না সংবরণ করে তার কান্না থামানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কিছুতেই মেয়ের কান্না থামছিল না। তখন বাবার চোখ দিয়েও গড়িয়ে পড়তে শুরু করে জল।
শুক্রবার (১৮ মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে এমন ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। দেশে ফেরা এবং পরিবারকে কাছে পাওয়ার আনন্দে এভাবেই কেটে যায় শিউলি আক্তার পিংকির কিছুটা সময়।
এরপর কথা হয় সাংবাদিকদের সঙ্গে। সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের যে বাসায় তিনি কাজ করতেন সেখানকার বর্ণনা দিতে গিয়ে পিংকি বলেন, সকালে উঠে থালা-বাসন পরিষ্কার করতাম। এরপর সারাদিন পানি দিয়ে ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করতে করতে পুরো শরীর ভিজে যেতো। শুকনা কাপড় পরারও সময় পেতাম না। রাতে ভেজা কাপড়েই ঘুমিয়ে পড়তাম, টের পেতাম না। সকালে ওঠার পর বুঝতাম গায়ের কাপড় ভেজা ছিল। পরের দিন আবার একই কাজ। এত কাজের বিনিময়ে সকালে একটা আর রাতে একটা রুটি দেয় খেতে দিতো। হাতে-পায়ে ধরে ভাত চাইলেও দিত না। ওরা অনেক ভালো-মন্দ খাবার খেতো, আমাকে দিতো একটা রুটি। আমার মতো কেউ যেনও আর সৌদি আরব না যায়।
‘সৌদি আরব যাওয়ার পর জানতো না কোথায় সে কাজ করছে। ভাষাও বোঝেন না তাই, ইশারায় নির্দেশ বুঝে নিয়ে সব কাজ করতেন। প্রতিদিন তিনতলা বাসা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করতে হতো তাকে। প্রতিটি তলার ১০টি বড় বড় রুম ছিল। এমনকি ছাদও পরিষ্কার করতে হতো প্রতিদিন’- বলেও জানায় পিংকি।
চোখের পানি মুছতে মুছতে পিংকি বলেন, প্রথম রোজার দিন (বৃহস্পতিবার) রাতে একটা রুটি দিয়েছিল খেতে। আমরা ৯ জন মেয়ে মিলে তাদের ভাত দেওয়ার অনুরোধ করার পর সেহরিতে ভাত দেয়। আলু আর পেঁয়াজের পাতার ভাজি দিয়ে ভাত খেয়েছি। ইফতার করেছি এক গ্লাস পানি দিয়ে।
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন কাজ করার পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি ক্যাম্প। নোংরা আর প্রচণ্ড গরমে থাকতে হয়েছে সেখানে।’
সৌদিতে পাঠাতে কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে পিংকির বাবা বাবুল সাজি জানান, প্রতিবেশী বাতেনের মাধ্যমে আল মনসুর ওভারসিস অ্যান্ড ট্রাভেলসকে ৪৫ হাজার টাকা দিয়েছি। মেয়ের আয় থেকে বাকি ৫৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে।
শুক্রবার (১৮ মে) রাতে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে সৌদি আরবে গিয়ে নির্যাতনের শিকার পাঁচ নারী শ্রমিক দেশে পৌঁছেছেন।
ফিরে আসা পাঁচ নারী শ্রমিক হলেন- মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর পিংকি, ঢাকার লালবাগের সুমাইয়া কাজল, নওগাঁর সুখী, ময়মনসিংহের ফুলপুরের মাজেদা ও ভোলার রিনা।
মানবাধিকারকর্মী জানান, নির্যাতনের শিকার নারীদের ৫ জন এমিরেটস এয়ারলাইন্সের EK584 নম্বর ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন। এদের সবাইকে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব যাওয়া ওই নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের দাম্মামের খোবার এলাকার একটি ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়। গত আড়াই মাসে এভাবে ৯ নারী ওই ক্যাম্পে আশ্রয় পান। তাদের মধ্যে ৫ জন আজ ফিরেছেন।
Leave a Reply