( জাগো কুমিল্লা.কম)
একটা সময় সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, এনামুল হক, তাইজুল ইসলাম, আবুল হোসেন রাজুদের সঙ্গে একই দলের হয়ে মাঠ মাতাতেন রাকিবুল হাসান। ডাক পেয়েছিলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের জন্য ঘোষিত ৩০ জনের স্কোয়াডেও। জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে বিভাগীয় পর্যায় পর্যন্ত সেবার রাকিব নিয়েছিলেন ৪০ উইকেট। হয়েছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। খেলেছেন কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের হয়েও।
সে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার গালিমপুর ইউনিয়নের গালিমপুর গ্রামের সন্তান।
স্বপ্ন দেখতেন একদিন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন, মাঠ মাতাবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে! আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার স্বপ্নটা ঠিকই পূরণ হয়েছে রাকিবুলের। তবে বাংলাদেশের নয়; ইতালির জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ ঘটেছে রাকিবুল হাসানের। ইতালির ক্রিকেট দলে তিনিই প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার। ইতিমধ্যে ইতালির জার্সি গায়ে পাঁচটি ম্যাচও খেলে ফেলেছেন ২৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। রয়েছে দুটি হাফ সেঞ্চুরি। ঝুলিতে পুরেছেন একটি উইকেটও!
ফুটবলের দেশ হলেও আশির দশকের গোড়ার দিক থেকে ছোট আকারে ক্রিকেটের চর্চা শুরু হয় ইতালিতে। বর্তমানে আইসিসির ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগ, বিশ্ব টি-টোয়েন্টির বাছাই পর্ব ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপসহ বেশ কিছু আয়োজনে খেলছে ইতালি। তবে ইতালির জাতীয় ক্রিকেট দলে স্থানীয়দের চেয়ে অভিবাসীর সংখ্যাই বেশি। পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকে ভাগ্যান্বেষণে ইতালিতে যাওয়া অনেকেই জায়গা করে নিয়েছেন ইতালির জাতীয় ক্রিকেট দলে।
তাদের ভিড়ে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের রাকিবও। যদিও সে পথটা মোটেও সুগম ছিল না তার জন্য। শুরুতে যখন ইতালিতে পাড়ি জমান তখন সেখানে অবস্থানের জন্য বৈধ কাগজপত্রও ছিল না রাকিবের কাছে। পরবর্তীতে নিজে থেকেই পুলিশের কাছে ধরা দেন তিনি। বয়স সতেরোর নিচে হওয়াতে ইমিগ্রেশন পুলিশই তার অনুমতিপত্রের ব্যবস্থা করে দেয়।
জীবনের এই অমসৃণ পথচলার মাঝেও ক্রিকেটকে ভোলেননি তিনি। কাজের পাশাপাশি নাম লেখান স্থানীয় ক্লাব বোলোনিয়া ক্রিকেটে। সেখানে খেলার তিন বছর পর বাঁ-হাতি এই অলরাউন্ডার ডাক পান পিয়ানর ক্রিকেট ক্লাব থেকে। পরবর্তীতে জায়গা করে নেন ইতালির জাতীয় ক্রিকেট দলেও। নিজের দেশের হয়ে না হোক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো খেলা হচ্ছে রাকিবুল হাসানের। বাস্তবতার শত কষাঘাতের মাঝেও স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, এটাই বা কম কিসে!
ইতালির হয়ে রাকিবুল এখন পর্যন্ত দুটি টুর্নামেন্ট খেলেছেন। সর্বশেষ খেললেন ২ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইউরোপ অঞ্চলের বাছাইপর্বে, ইতালি যেখানে হয়েছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। আগামী মার্চ-এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় চূড়ান্ত পর্বে শীর্ষ দুই দলের মধ্যে থাকলেই ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবে রাকিবুলের ইতালি, হয়তো খেলবেন রাকিবুলও।
বাংলাদেশের রাকিবুল প্রথম ইতালির জার্সি গায়ে জড়ান গত বছরের আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগ ডিভিশন ফাইভে। বল হাতে তেমন সাফল্য না পেলেও ওপেনিংয়ে নেমে পাঁচ ম্যাচের দুটিতেই করেছেন ফিফটি। বোলিংয়ে সাফল্য দেখলেন এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে। পাঁচ ম্যাচ ৮ উইকেট। বেলজিয়াম ও ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে নিয়েছেন তিনটি করে। রাকিবুলের বাঁহাতি স্পিনটা যে ইউরোপের ব্যাটসম্যানদের কাছে একটু দুর্বোধ্যই, সেটির প্রমাণ এই দুই ম্যাচে তিনি রান দিয়েছেন ১৭ আর ১৩।
ইউরোপের বেশির ভাগ ক্রিকেট দল যে রকম হয়, ইতালির দলটাও অনেকটা সে রকম। উপমহাদেশের ক্রিকেটারদেরই ছড়াছড়ি। অবশ্য অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী পাঁচজন ইতালিয়ান ক্রিকেটারও আছেন দলটাতে। রাকিবুলসহ তাঁদের সবার একটাই স্বপ্ন-২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা। রাকিবুলের কণ্ঠ আবেগে বুজে এল এই লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে, ‘আমরা চেষ্টা করছি ইতালির ক্রিকেটকে ওপরের দিকে নিয়ে যেতে। স্বপ্ন একটাই ইতালির হয়ে একদিন বিশ্বকাপে খেলা।’
কী বিস্ময়! জীবনসংগ্রামে অজানা দেশে পাড়ি জমানো কিশোর আজ তারুণ্যে এসে বিশ্বকাপে নাম লেখানোর স্বপ্নে বিভোর! বাংলাদেশের তারুণ্য আর ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন হয়ে রাকিবুল মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন ইতালির নীল জার্সি গায়ে।
https://www.facebook.com/kelum.perera1/videos/10156707103551383/
Leave a Reply