অনলাইন ডেস্কঃ
ক্ষমতায় থেকেও যেসব নেতা বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের মূল্যায়ন করার কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে আওয়ামী লীগ। দলটির হাইকমান্ড আগামী কাউন্সিলে বঞ্চিতদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে মত দিয়েছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা মূল্যায়নের লক্ষ্যে ঢাকাসহ দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছেন। গণভবন সূত্র কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ অনুষ্ঠিত হতে পারে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিল। এ কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের প্রধান লক্ষ্য সরকার থেকে দলকে আলাদা করার পাশাপাশি টানা তৃতীয় মেয়াদে বঞ্চিতদের মূল্যায়ন।
জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও মনোনয়ন চেয়ে পাননি, সরকারের লাভজনক কোনো পদে বসেননি কিংবা আর্থিক সুবিধা ভোগ করেননি—এমন নেতাদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তরুণদের কমিটিতে স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। তাদের দিয়েই আগামী কমিটি গঠন হবে। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন—এমন নেতাদের সকলেরই বয়স হয়ে গেছে। এখন নেত্রী (শেখ হাসিনা) চান আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগী নেতৃত্ব বিকাশ হোক। তরুণরা অনেক বেশি সৃজনশীল। সে জন্য নতুন প্রজন্মের হাতেই আমাদের নেতৃত্ব দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কমিটিতে প্রতিবারই তরুণদের গুরুত্ব দেওয়া হয়। এবারও আমরা নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি করব। কমিটিতে স্থান দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি যোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হবে। প্রথমত, দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা; দ্বিতয়ত, দলে গ্রহণযোগ্যতা; তৃতীয়ত, যে কাজটি তাকে দেওয়া হবে তা সে সঠিকভাবে করতে পারবে কি না। এই তিনটির মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়ার বিষয়ে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।’ সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দলটির গঠনতন্ত্র অনুসারে, আগামী অক্টোবরে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তবে ডিসেম্বরের আগে আওয়ামী লীগের পরবর্তী জাতীয় সম্মেলনের সম্ভাবনা কম। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় ধরনের রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কারা আসবেন এর একটা প্রতিফলন থাকবে এই কমিটিতে। তরুণ ত্যাগী নেতাদের অনেককেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, সরকার থেকে দলকে আলাদা রাখতে আওয়ামী লীগের আগামী কমিটিতেও বেশির ভাগ পদে যাদের স্থান দেওয়া হবে তাদের মন্ত্রিসভায় রাখা হবে না।
দলকে সুসংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে মন্ত্রী-এমপি নন—এমন নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে পদোন্নতি পেতে পারেন বিগত জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান; দুই সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। বিগত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনেরও পদোন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী পদোন্নতি পেয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক হতে পারেন। কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য রিয়াজুল কবির কাউছারকে সম্পাদকমণ্ডলীতে দেখা যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলোর মতে, আসছে কাউন্সিলে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে কারা নেতৃত্ব দেবেন—সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এটি মাথায় রেখে নতুন কমিটি সাজানো হবে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে দলকে আরো বেশি ভূমিকায় রাখার উপযোগী করে গড়তে পারবেন—এমন তরুণ, মেধাবী নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সাবেক বেশ কজন নেতাকে বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে। সূত্রগুলো জানায়, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে স্থান দেওয়া হতে পারে।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, মনিরুজ্জামান মনির, মিহীর কান্তি ঘোষাল ও ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন স্থান পেতে পারেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। জাসদ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফি আহমেদ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন দুই যুগ আগে। তাঁর পর্যায়ের সাবেক ছাত্রনেতারা কেউ মন্ত্রী, কেউ এমপি, কেউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। কিন্তু একসময়ের এই প্রভাবশালী ছাত্রনেতা তেমন কোনো মূল্যায়ন পাননি। ফলে তাঁকেও এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখা যেতে পারে।
Leave a Reply