(অমিত মজুমদার,কুমিল্লা)
এ কথা সত্য, যে কোন ছাত্রী আমার নিকট সহজে তার সমস্যার কথা বলত। আল্লার কসম করে বলছি কোন ছাত্রীর সাথে আমার দৈহিক সম্পর্ক ছিলনা । আত্মহত্যার আগে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল ওয়াব চিরকুটে এমন তথ্য লিখে যান।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮ টায় মহিলা কলেজ রোড মাদার কেয়ার হাসপাতালের পেছনের ভাড়াটে বাসার দুই তলা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার লেখা দুইটি চিরকুট উদ্ধার করেছে পুলিশ। জাগো কুমিল্লা পাঠকের জন্য দুইটির চিরকুট হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্রথম চিরকুট:
আমার মৃত্যু জন্য কেউ দায়ী নহে। দায়ী আমার নসীব । অধ্যক্ষ থাকাকালীন দুই একজনের সাথে তক্ক বিতর্ক হয়েছিল। সবচেয়ে বড় দু:খ একজন শ্রদ্ধেয় এবং স্বনামধন্য ব্যক্তিকে আমি নাকি আমি কি বলেছি। এ কথা শুনে আমার অন্তর ভূমি কম্পের মতো কেপে উঠেছে। কাকে এবং কে অভিযোগ আনল মৃত্যুর আগে তা উল্লেখ করলাম না।
আমি সেই ব্যক্তির জামাতা হওয়ার কথা ছিল। এ কথা সত্য, যে কোন ছাত্রী আমার নিকট সহজে তার সমস্যার কথা বলত। আল্লার কসম করে বলছি কোন ছাত্রীর সাথে আমার দৈহিক সম্পর্ক ছিলনা । দূর্বল চিত্তের অসুস্থ মানুষ একথা শুনে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার জন্য কাল হয়েছে কিছু গোপন কথা অবগত হওয়া।
জীবনের কাজ গুলো অগোছালো থাকা। নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করানো যাতে প্রতারণার স্বীকার হয়েছি। অন্যের কাজ করেছি নিজের কাজ করার খেয়াল ছিলা না। আমার স্ত্রী কন্যাকে কি করে গেলাম জানিনা। নসীব দোষে মারা গেলাম।
দ্বিতীয় চিরকুট:
আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী আমার নসীব এবং গরম মাথা এবং কিছু লোক। অগোছালো কাজ। স্ত্রী কন্যা নির্দোষ, ভাই বোনেরা দায়ী নয়। যারা দায়ী তাদের নাম বললাম না। চরিত্রতে কোন দোষ নেই । কারো সাথে দেহিক সম্পর্ক ছিল না। সেক্স ছিল না। এ জন্য বহু চেষ্টা করে পরে আর ডাক্তার দেখাই নাই। ডায়াবেট হাই প্রেসার প্রস্টেট গ্লান্ড এনলার্জ ক্যান্সার সন্দেহ পাইলাম ও ছিল অনেক দিন। চোখের রেটিনা নষ্ট হয় ভুল চিকিৎসায়। তবে ১০০% সঠিক কিনা জানি না।
রাজনৈতিক বক্তব্যে অনেক শত্রু জন্ম নিতে পারে। গোপাল গঞ্জ ও কুমিল্লা নিয়ে কবিতা। এলমুনিয়ামের পাত্রের মত দ্রুত উত্তেজিত হতাম রাগারাগি হতো। এতে কারো মনে আঘাত লাগতে পারে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে কিছু রাখতাম না। অধ্যক্ষ সাহেবের কথা সান্তনা পেতাম। আবার ভুল বুঝাবুঝি ও হয়ে যেত।
দুইটি চিরকুট পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, কোন একজন ব্যক্তি তাকে ছাত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্কের অভিযোগ ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে মানসিক ভাবে ব্ল্যাকমেইল করতো। কোন একটি বিষয়ে নিয়ে কারো গোপন তথ্য আব্দুল ওয়াবের নিকট ছিল। এছাড়া তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ অন্যকে দিয়ে করার কারণে প্রতারণা শিকার হয়েছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তবে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদর নাম চিরকুটে উল্লেখ করেনি।
এ বিষয়ে প্রফেসর আব্দুল ওয়াব স্ত্রী মরিউব আক্তার জাগো কুমিল্লা ডট কমকে বলেন, সেহেরীর পরবর্তীতে নামাজ পড়ার জন্য বাথরুমে ওজু করতে গিয়ে ওনার ঝুলন্ত লাশ দেখে আমি চিৎকার দেই। গত কয়েক দিন আগে আমাদের বার বার বলতো , তোমরা তো ভাত না খেয়ে মরে যাবে। চর্থার মানুষের তোমাদের লুটপাট করে খেয়ে ফেলবে। সে সব সময় মানসিক অশান্তিতে ভুগতো। তার সম্পত্তি অন্যান্য ভাইয়ের জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে।চাকরীর পেনসনের কাগজ পত্র নিয়ে এদিকে ওদিক ঘুরে ফেরা করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে লাবিবা আফরোজ জাগো কুমিল্লা ডট কম কে জানান, আমার আব্বু আমাকে বার বার বলতো আমার অডিট টা কেন হলো না। আব্বু বলতো ভিক্টোয়িরা-সরকারি কলেজের অডিট হয়ে গেছে আমারটা কেন এখনও অডিট হলো না। আব্বুকে কলেজ থেকে এমনিই চাপে রাখতো। আব্বু যে কথা বলতো এটাকে একশ রকম ভাবে কথা বানিয়ে দিতো। কলেজে থেকে কি কারণে চাপ দিতো এমন প্রশ্নে মেয়ে জানান, পেনশনের কাগজ পত্র নিয়ে গড়িমশি করতো। আব্বু কলেজে যাইতো। জহির স্যার আব্বুকে কলেজে যেতে মানা করেছিল। কলেজে যেন আর না যায়। আমি কি বিচার চাইবো আমার আব্বুকে তো আর খোঁজে পাব না আমি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: জামাল নাছের জাগো কুমিল্লা ডট কমকে জানান, এ খবরটি শুনে আমি খুবই মর্মাহত।যার মাত্র কয়েকদিন আগে পিআরএল শেষ হলো। তার পেনসন প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। এমন অবস্থায় ওনার আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য খুব বেদনা দায়ক। আমি মাত্র দুই মাস হলো যোগদান করেছি।আমি যতদূর জানতে পেরেছি পেনসনের পূর্ব প্রস্তুতি গুলো প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। গত মার্চ মাসে তিনি কিছু খরচ পেয়েছেন।তিনি ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। সেখানে তার কিছু কাগজ-পত্রের জটিলতার কারণে হয়তো তিনি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ঈদের ছুটির পর আগামী ২৩ জুন ওনার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ক্লাশ স্থগিত করে শোকসভা করবো।
কুমিল্লা অজিত গুহ কলেজের অধ্যক্ষ হাসান ইমাম মজুমদার ফটিক জাগো কুমিল্লা ডট কম জানান, তিন একজন ভাল শিক্ষক, একজন ভাল মানুষ হিসেবে জানতাম।ওনার মধ্যে মানসিক অস্তিরতা ছিল। চোখের অসু্স্থতা নিয়ে আমাকে প্রায় সময় বলতো।ওনার মেয়ের ফিউচার নিয়ে কথা বলতো। বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি, কুমিল্লা জেলা শাখার পক্ষ থেকে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। ওনার বিদায়ী আত্মার মাখফেরাত কামনা করছি।
কোতয়ালী মডেল এস আই সহিদুল ইসলাম জাগো কুমিল্লা ডট কমকে জানান, খবর পেয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করেছি। মৃত্যুর আগে লেখা চিরকুট গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা ময়াতদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাচ্ছে না। লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য সোমবার সেহেরির পরবর্তীতে কোন একসময় বাথরুমে ঝর্ণার পাইপের সাথে ঝুলে আত্মহত্যার করে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল ওয়াব । সে সদর দক্ষিণ উপজেলার ২ নং চৌয়ারা ইউনিয়নের হেমজোড়া গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে।তিনি কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে ২০১৪ সালের ২ জুন থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬সাল পর্যন্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। তার অন্ডকোষে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
Leave a Reply