নিজস্ব প্রতিবেদক।। ‘করোনা ভাইরাস নয় ,আমিই জিতবো এই আত্মবিশ্বাসই করোনা থেকে মুক্তির মহাঔষুধ ’। গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের মনীষা আফরোজ সাম্প্রতিক এক ফোনালাপে প্রতিবেদকে এ কথা বলেন।
তিনি আরো জানান-করোনা পজেটিভ হওয়ার পর অনেকে ভয় পেয়ে ভাবেন আমার মৃত্যু অবধারিত। এই চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে যদি জটিল কোন রোগ-ব্যাধী না থাকে, যদি সে নিজেকে সবল কিংবা শক্তিশালী মনে করে এবং মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে পারে । তবে ঐ ব্যক্তির উপর করোনা ভাইরাস সাধারণত সর্দি-কাশির মতোই প্রভাব ফেলবে।
প্রায় দেখা যায়, কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হয় । সে মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পড়ে। করোনায় পজেটিভ ইনফরমেশন পাওয়ার পর থেকে ২৪ ঘন্টায় তার মাথায় তাৎক্ষনিকভাবে কতগুলো প্রশ্ন ঘুরতে থাকে যেমন- কাকে ফোন দিবে? কোন ডাক্তারের সাথে কথা বলবে? কোন হাসপালে ভর্তি হতে হবে? সিট পাবে কিনা? এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। যেহেতু করোনার কোন টীকা বা ঔষধ আবিষ্কার হয়নি তাই এসব নিয়ে তাৎক্ষনিক এত চিন্তা করা সম্পূর্ণ্য অযুক্তিক মনে করি।
পরে মনীষা আফরোজ করোনার বিষয়ে সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে তার তৈরি করা একটি ‘গাইড লাইন’ প্রতিবেদকের নিকট প্রেরণ করেন তা পাঠকদের জন্য হুবাহু তুলে ধরা হলো:
উপসর্গ দেখা দিলে যা করবেন:
কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে বা উপসর্গ থাকলে আতঙ্কিত হবেন না। হসপিটালে বেড পাবেন, সেই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। সর্দি,কাঁশি,গলা ব্যাথা ও জ্বর দেখা দিলে সাথে সাথে আইসোলেশনে চলে যান। আইসোলেশনে যাবার ব্যবস্থা না থাকলে বাসায় মাস্ক ব্যবহার করুন। কিছু সময় পর পর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। বাচ্চা ও বয়স্কদের থেকে দূরে থাকুন। আপনার কাপড় আলাদা রাখুন। মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন। যে সকল মায়েরা বাচ্চাদের দুধ খাওয়ান তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের উপসর্গ দেখা দিলে বাচ্চা ধরার আগে বা দুধ খাওয়ানোর পূর্বে হাত ধুয়ে নিন ও মুখে মাস্ক পরে নিন। বাচ্চাদের খাওয়ার পাত্রগুলো ধরার আগে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। আমার সারাবছর ঠান্ডা লেগে থাকে, আমার যখন তখন শরীর ব্যথা হয়, বৃষ্টি হয়েছে বলে ঠান্ডা লেগেছে, ধুলার কারণে সর্দি হয়েছে, আমার কিছু হবেনা, আল্লাহ ভরসা, দয়া করে এসব মাতব্বরি করবেন না।
আইসোলেশনে যাওয়ার সময়ে আপনার সঙ্গে যা নেওয়া আবশ্যক:
মোবাইল, চার্জার , ল্যাপটপ, মাল্টিপ্লাগ, স্যান্ডেল, এরোসল, প্যারাসিটামল, এন্টিহিস্টামিন, ইনহেলার, পিপিআই, Zinc tablet, mask, gloves, hand sanitizer, Pulseoxymeter কাপ, গ্লাস, প্লেইট,টি ব্যাগ ,যে কোন মিনারেল ওয়াটার,১/২লিটার ও ৫ লিটার সাইজ, শুকনো খাবার– মুড়ি, চিড়া, কলা, খেজুর, খাবার স্যালাইন ১০ প্যাকেট। কেটলি/ ইলেক্ট্রিক কেটলি,মধু,কালিজিরা ,আধা, চিনি ,লবন্গ, লেবু,লবণ,মাল্টা, কমলা, আপেল এবং অন্য সিজোনাল ফল,প্লাস্টিক / পলি ব্যাগ,টিস্য,প্রয়োজনীয় বই,এক্সট্রা কাপড়, টাওয়েল,সাবান –লাক্স, চাকা, ডিটারজেন্ট, সিভিট ফোরট ট্যাব্লেট,ভিটামিন ডি — যদি খেয়ে না থাকে।, ভিনেগার– গারগল করার জন্য,আয়না, মগ, বালতি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যা খাবেন:
Ceevit 1+0+1 15 days,Tab. Xinc 1+0+1 15 days
আইসোলেশনে যা করলে উপকার হবে:
হালকা গরম পানিতে লবন দিয়ে গড়্গড়া করা। হালকা গরম ভিনেগার দিয়েও গড়্গড়া করা যায় দিনে ৩-৪ বার, আদা, রং চা চিনি ছাড়া প্রয়োজন মত, গরম পানির ভাপ নেয়া দিনে ২-৩ বার। মধু, লেবুর হালকা গরম পানি পান করা, অতিরিক্ত গরম পানি অনেক সময় গলার ক্ষতি করতে পারে। সেক্ষেত্রে হালকা কাশিতে রক্ত আসতে পারে।ব্যায়াম করা। অধিকক্ষণ শুয়ে না থাকা। সাহস রাখা,আশাহত না হওয়া, বেশি বেশি স্ব -স্ব ধর্মীয় এবাদত করা।
কোভিড ১৯ টেস্ট পজিটিভ আসলে কি করবেন:
কোভিড আক্রান্ত হলে প্রথমেই যে বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে- সাহস হারানো যাবে না। করোনায় পজেটিভ ইনফরমেশন পাওয়ার পর থেকে ২৪ ঘন্টায় ঐ ব্যক্তির মাথায় তাৎক্ষনিকভাবে কতগুলো প্রশ্ন ঘুরতে থাকে যেমন- কাকে ফোন দিবে? কোন ডাক্তারের সাথে কথা বলবে? কোন হাসপালে ভর্তি হতে হবে? সিট পাবে কিনা? এসব নিয়ে চিন্তা করা যাবে না । মাথায় রাখতে হবে আক্রান্তের ৫-৭% হাসপাতালে যাওয়া লাগে। আর তাদের মধ্যে ১-২% আইসিইউ এর দরকার হতে পারে।
স্বল্প ও মধ্যম উপসর্গের জন্য বাসায় চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
স্বল্প উপসর্গ সম্পন্ন অবস্থায় সাধারণত কোন চিকিৎসা দরকার হয়না যদি কোন অতিরিক্ত ঝুকির লক্ষন না থাকে।
জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল Tab. Napa extend1+1+1
প্রেসার মাপার যন্ত্র,পালস অক্সিমিটার, থার্মোমিটার, ইনহেলার নেয়ার জন্য একটি ভালো মানের স্পেসার ,স্মার্ট ফোন। বাসায় একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কোভিড চিকিৎসার জন্য খুবই সহায়ক । আবার অক্সিজেন সিলিন্ডার সতর্কতার সাথে ব্যবহার না করলে মারাত্নক খারাপ অবস্থা হতে পারে। যে ঘরে সিলিন্ডার থাকবে সেখানে কোন অবস্থায় ধূমপান করা যাবেনা, কোন ধরনের মশার কয়েল জ্বালানো যাবেনা, যে কোন ধরনের দাহ্য পদার্থ থেকে দূরে রাখতে হবে।
কখন হাসপাতালে যাবেন?
শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে বা পালস অক্সিমিটারের রিডিং অক্সিজেনসহ ৯০ এর নিচে চলে গেলে
,বুকে মারাত্নক চাপ বা ব্যথা অনুভব করলে,মারাত্মক দুর্বল হয়ে গেলে, জ্বর বেড়ে যাচ্ছে বা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে,মারাত্নক ডায়রিয়া হলে ,মুখ বা জিহবা নীল হয়ে গেলে।
বাসায় পালস অক্সিমিটার না থাকলে কি করবেন:
একবার শ্বাস নিয়ে আপনি য৯ এর বেশি গুনতে না পারেন অথবা ৫ সেকেন্ডের বেশি সময় গুনতে না পারেন তাহলে খারাপ । আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
Leave a Reply