( জাগো কুমিল্লা.কম)
আজ সোমবার শুভ মহালয়া। শারদীয় দুর্গোত্সবের পুণ্যলগ্ন। পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের শুরু। পুরানমতে এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে।
মহালয়ার মাধ্যমে দেবী দুর্গা আজ পা রাখবেন মর্ত্যলোকে। অশুভ অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হওয়ার পর চারদিকে শুরু হয় অশুভ শক্তির পরাক্রম। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা। তখন দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা।
শরতের কাশফুলের সাদা শুভ্রতা মনে করিয়ে দেয় বিপদনাশিনী দেবী দূর্গার আগমনী বার্তা। মহালয়া’র মধ্যদিয়ে শুরু হলো দূর্গোৎসবের অনুষ্ঠানিকতা। উৎসবকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে বিভিন্ন আমেজ বইতে শুরু করেছে। বাঙালী হিন্দু সনাতন ধর্ম্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ শারদীয়া দূর্গোৎসব আসছে ১৪ অক্টোবর রবিবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবী দূর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হবে আর ১৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিজয়া দশমীর পর প্রতিমা বির্সজনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে।
সারাদেশের ন্যায় এবারও কুমিল্লা জেলা শহরসহ ১৬ উপজেলায় প্রায় ৭’শ ৫৭টি পূজামন্ডপে চলছে দূর্গাপুজোর ব্যাপক প্রস্তুতি। নর-নারী, তরুণ-তরুণীদের এমনকি বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও দেবীর আর্শিবাদ পাওয়ার আশায় প্রতিজ্ঞায় প্রহর গুন্ছে পুজার এই শুভ লগ্নে। কুমিল্লার ১৬ উপজেলায় প্রায় ৭’শ ৫৭টি পূজামন্ডপের মধ্যে কুমিল্লা মহানগর এলাকায় ৪৮টি ও আদর্শ সদর উপজেলায় ২৪টি, মুরাদনগর উপজেলায় ১শ’ ৫৩টি, নাঙ্গলকোট উপজেলায় ৮টি, লাকসাম উপজেলায় ৩৪টি, হোমনা উপজেলায় ৪৩টি, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ১৪টি, বুড়িচং উপজেলায় ৩৯টি, চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ২৪টি, দাউদকান্দি উপজেলায় ৫৪টি, সদর দক্ষিণ উপজেলায় ৩১টি, দেবিদ্বার উপজেলায় ৮৫টি, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ১৩টি, বরুড়া উপজেলায় ৮৬টি, চান্দিনা উপজেলায় ৬৭টি, তিতাস উপজেলায় ১১টি ও মেঘনা উপজেলায় ০৬টি পূজামন্ডপ।
এদিকে, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর বলেন, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর। “ধর্ম যার যার-উৎসব সবার”-এই শ্লোগানটি সামনে রেখে শারদীয়া দুর্গোৎসবকে সার্বজনীন উৎসবে রূপ দিতে সকল প্রকার অশুভ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সজাগ থাকাসহ সকল ধর্মের অনুসারীদের একে অন্যের প্রতি সহনশীল হওয়ার জন্যও অনুরোধ জানান কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর। তিনি আরো বলেন- হিন্দু সনাতন ধর্ম্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপুঁজো সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে জেলার প্রায় ৭’শ ৫৭টি পূজা মন্ডপে নেয়া হবে সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ পূঁজোমন্ডপ গুলোতে থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ গোয়েন্দা নজরদারীতে। এ ছাড়াও যেকোন ধরনের নাশকতা এড়াতে মাঠে থাকবে ১৮ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও র্যাব সদস্যরা।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার) পিপিএম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দঃ) আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন- হিন্দু সনাতন ধর্ম্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপুঁজো সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে জেলার প্রায় ৭’শ ৫৭টি পূজা মন্ডপে নেয়া হবে সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ পূঁজোমন্ডপ গুলোতে থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ গোয়েন্দা নজরদারীতে।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টাণ ঐক্য পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এড্ভোকেট তাপস চন্দ্র সরকার বলেন- নর-নারী, তরুণ-তরুণী এমনকি বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও দেবীর আর্শিবাদ পাওয়ার আশায় প্রতিজ্ঞায় প্রহর গুন্ছে পুজার এই শুভ লগ্নে। আজ সোমবার মহালয়া’র মধ্যদিয়ে দেবীদূর্গাকে স্বর্গ্যলোক থেকে মর্ত্তলোকে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরুর ছয় দিন আগে হয় এই মহালয়া। ইতোমধ্যে শারদীয় দুর্গাপূজার বিভিন্ন আমেজ বইতে শুরু করেছে। “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” -এই শ্লোগানটি সামনে রেখে বাঙালী হিন্দু সনাতন ধর্ম্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ শারদীয়া দূর্গোৎসব আসছে ১৪ অক্টোবর রবিবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবীদুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হবে আর ১৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিজয়া দশমীর পর প্রতিমা বির্সজনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে। শাস্ত্রীয় মতে, এ বছর দেবী দুর্গা ঘোটকে আগমন @ ফলম্ ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে এবং দেবী দোলায় গমন @ ফলম্ মড়কং ভবেৎ।
মহালয়া সম্পর্কে জেলা ঐক্য পরিষদ নেতা আরো বলেন, ‘পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে দেবীপক্ষের শুরুই হচ্ছে মহালয়া। মহালয়ার পর থেকে ১৫দিন হচ্ছে দেবীপক্ষ। মহালয়ায় দেবী দুর্গার আবাহন ছাড়াও পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তিকামনা করে শ্রদ্ধা জানানো হয়, যাকে তর্পণ বলে।’ আর শারদীয় দুর্গা উৎসবকে অকালবোধনও বলা হয়। অকালবোধন সম্পর্কে তিনি বলেন- রামচন্দ্র রাবণ বধের জন্য অকালে শরৎকালে দেবীর পূজা করেছিলেন। তখন থেকে এর নাম হয় অকালবোধন বা শারদীয় দুর্গাপূজা। পুরাণ অনুসারে, রাজ্যহারা রাজা সুরথ এবং স্বজনপ্রতারিত সমাধি বৈশ্য একদিন মেধস মুনির আশ্রমে যান। সেখানে মুনির পরামর্শে তাঁরা দেবী দুর্গার পূজা করেন। দেবীর বরে তাঁদের মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এ পূজা বসন্তকালে হয়েছিল বলে এর নাম ছিল ‘বাসন্তীপূজা’। বাসন্তী পূজা হয় চৈত্রের শুক্লপক্ষে আর শারদীয় দুর্গাপূজা হয় শরৎকালে। তবে বর্তমানে শারদীয় দুর্গাপূজাই হিন্দু সনাতন ধর্ম্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে।
Leave a Reply