অনলাইন ডেস্ক:
আমাদের শৈশব কৈশোর কখনোই জীবন থেকে আলাদা ছিলো না, এখনো নেই। মিশনারী স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং শৃঙ্খলা শিখেছি, ক্লাস থ্রি’তে মারামারির অভিযোগে TC পেয়ে সরকারী স্কুলে ভর্তি হতে হয়েছে। বাঁচার প্রবল আগ্রহ আর শিক্ষাসনদ প্রাপ্তির মরিয়া চেষ্টা ছিলো, আছে এখনো। শিক্ষক শিক্ষয়ীত্রিদের শাস্তিকে হাসিমুখে বরণ করতাম আশীর্বাদ কিংবা দোয়া ভেবে, কখনো মরে যেতে ইচ্ছে হয়নি। এখনকার অস্থির সমাজ আর ভুলে যাওয়া জাতির বৈশিষ্ট্য মন্ডিত চরিত্র আমাদের সন্তানদের সকল চলার পথকে দিনে দিনে পঙ্কিল আর বন্ধুর করে ফেলছে।
আমার দুই সন্তান এক্স ক্যাডেট, রুদ্র আদমজী ক্যান্ট কলেজে ইন্টার পড়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ছিলো এবং আছে- বাচ্চারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না স্কুল চলাকালীন সময়ে। আমাদের পুরনো আর বর্তমানের বিভাজন সুস্পষ্ট, অবক্ষয় আর না বোঝার সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। আমি আর আমার বেগম রুদ্রকে কখনোই এ্যালাউ করিনি কলেজ চলাকালীন সময়ে মোবাইল ব্যবহারের পক্ষে। ভুল করেছে, ধরাও পড়েছে, শাস্তিও পেয়েছে। আত্মহত্যায় কেনো প্ররোচিত হবে শিশুরা !!! রুলস মানতেই হবে।
অরিত্রি’র অভিমান সঠিক ছিলো। সন্তানদের প্রতিযোগীতায় ফেলেছি আমরাই, ভুল আমার কিংবা আমাদের। একটা সময় ছিলো যখন অনেক সন্তানের বাবা মা’য়েরা অত্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো রোগে অসুখে সন্তানের মৃত্যুতে। অরিত্রি এ প্রজন্মের বাচ্চা, শিক্ষক আর ম্যানেজমেন্ট এক জিনিষ হতে পারেনা, এটা বাচ্চাদের বোধগম্য হওয়ার কথাও নয়, এখানে প্রশ্ন তোলার ন্যূনতম সূযোগ নেই।
তবুও প্রশ্ন এসেই যায় – অরিত্রি কেনো নেই আমাদের মাঝে !! মা আমার– এটা আমার এবং আমাদের ব্যর্থতা, একটা মোবাইল ফোন অপমৃত্যুর কারন হতে পারেনা । আমিই দায়ী, একটু শাসনে থাকলে হয়তো তুমি মোবাইল ফোনটা সঙ্গে নিতে না। আমরা শাসনের সাথে স্নেহের সম্পর্ক ভুলে যাচ্ছি। জাতিগত অভ্যাস অনুযায়ী অরিত্রি আবারো হবে একটা ভুলে যাওয়া ইতিহাস। আমরা মা’বাবারা আর কাঁদতে চাইনা সন্তানদের অকাল প্রয়ানে। অরিত্রি মা আমার … একজন দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে তোমার প্রতি অবহেলার জন্য ক্ষমা চাই। আসুন আমরা অরিত্রী’দের সুন্দর ধরনী দেয়ার চেষ্টা করি … কোন লাভ নেই, তবুও সমবেদনা তোমার পরিবারের জন্য …’।
লেখক: জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী
Leave a Reply